জাল নিবন্ধন সনদ তোলার আবেদন করলেন সেই শিক্ষক, অতঃপর...

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারিকৃত স্কুলে কর্মরত শিক্ষক সেই মো. জাকির হোসেনের সেই শিক্ষক নিবন্ধন সনদটি জাল বলে জানিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তিনি চাঁদপুরের শাহরাস্তি সরকারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানকে বলা হয়েছে। কিন্তু ওই শিক্ষক সম্প্রতি তার জাল সার্টিফিকেট তোলার আবেদন করেছেন! তবে এনটিআরসিএ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তার সনদটি জাল। তাই তার সার্টিফিকেট ইস্যু করা সম্ভব নয়। বিষয়টি জানিয়ে সোমবার (৭ জুন) ওই শিক্ষককে চিঠি পাঠিয়েছে এনটিআরসিএ।

এরআগে জাল সনদধারী এই শিক্ষকের সনদ নিয়ে এনটিআরসিএতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। সনদটি নিয়ে স্বয়ং এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তার কাছে প্রমাণক কাগজ পত্র ও অ্যাডমিট কার্ড চাইলে তিনি কোন কিছুই দিতে পারেননি তিনি। পরে ওই শিক্ষকের সনদ জাল বলে প্রমাণ পেয়েছিল এনটিআরসিএ। বিষয়টি নিয়ে গত ৫ এপ্রিল দৈনিক শিক্ষাডটকমে ‘সরকারিকৃত স্কুল শিক্ষকের জাল সনদ নিয়ে তোলপাড়!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।

আরও পড়ুন : সরকারিকৃত স্কুল শিক্ষকের জাল সনদ নিয়ে তোলপাড়!

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, দৈনিক শিক্ষাডটকমে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১১ এপ্রিল জালসনদধারী ওই শিক্ষক তার শিক্ষক নিবন্ধন সনদ তোলার আবেদন করেন। তিনি দাবি করেন, তার ২য় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। ৫ এপ্রিল দৈনিক শিক্ষাডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি ৬ এপ্রিল যাত্রবাড়ী থানায় জিডিও করেছেন। জিডিতে তিনি দাবি করেছেন ৬ এপ্রিল তার অ্যাডমিট কার্ড হারিয়েছে। সেই জিডির কপি সংযুক্ত করে তিনি গত ১১ এপ্রিল সনদ উত্তোলনের আবেদন করেন। তবে বিষয়টি ধরে ফেলেছে এনটিআরসিএ। তার সনদটি ইস্যু করা সম্ভব নয় বলে সোমবার (৭ জুন) চিঠি পাঠিয়ে সাফ ওই শিক্ষককে জানিয়ে দিয়েছে তার সনদ ইস্যু করা সম্ভব নয়। 

জানা গেছে, চাঁদপুরের শাহরাস্তি সরকারি বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেন জাল শিক্ষক নিবন্ধন সনদ নিয়ে চাকরি করছিলেন। পরে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর তার সনদটি যাচাইয়ের জন্য এনটিআরসিএতে পাঠানো হয়। পরে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর তার সনদটি জাল বলে যাচাই প্রতিবেদন দেয় এনটিআরসিএ। তিনি স্বাক্ষর জাল করে সনদ তৈরি করেছিলেন বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছিল এনটিআরসিএ। কিন্ত পরে ওই শিক্ষক তার সনদটি সঠিক বলে দাবি করেন। তিনি জানান, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। 

এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষক জাকির হোসেন তার সনদটি সঠিক বলে দাবি করার পর যাচাইয়ের সময় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষকের সনদ যাচাই করে দেখা গেছে, ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তীর্ণ জাকির হোসেন নামে অপর এক প্রার্থীর সনদ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেটি শাহরাস্তি বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জাকির হোসেনের সনদ নয়। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনটিআরসিএর সহকারী পরিচালক তাজুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কাগজপত্র যাচাই করে আমরা দেখতে পাই ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে ২য় শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার উত্তীর্ণ প্রার্থীদের তালিকায় ওই শিক্ষকের নাম ও পিতার নামে উত্তীর্ণ একজন প্রার্থী আছে, তবে ওই প্রার্থী জাকির হোসেন নন। জাকির হোসেন দাবি করেছেন তিনি, ঢাকা বোর্ড থেকে সনদটি নিয়েছেন। তবে, ঢাকা বোর্ডের রেজিস্ট্রারে দেখা গেছে, জাকির হোসেন সনদটি এখনো বিতরণ করা হয়নি। উত্তীর্ণ প্রার্থী সনদটি সংগ্রহ করেনি।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, শিক্ষক জাকির হোসেন যে সনদটি দাখিল করেছেন তা জাল। কারণ শাহরাস্তি স্কুলের শিক্ষক জাকির হোসেনই যে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তীর্ণ প্রার্থী তার কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। তার কাছে অ্যাডমিট কার্ড বা পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট কাগজ চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোন প্রমাণক কাগজ জমা দিতে পারেননি। পরে তিনি থানায় জিডি করে দাবি করেন তার অ্যাডমিট কার্ড তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। একই সাথে সনদ উত্তোলনের আবেদন করেছেন। 

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, তথ্য বিশ্লেষণ করেও এনটিআরসিএ প্রমাণ পেয়েছে যে জাকির হোসেন নিবন্ধিত প্রার্থী নন। তিনি যদি প্রকৃত প্রার্থী হতেন তাহলে শিক্ষা বোর্ড থেকে তার প্রকৃত সনদটি সংগ্রহ করতেন। কিন্তু তিনি তা না করে একটি জাল সনদ তৈরি করেছেন। এনটিআরসিএর ডাটাবেসে সংরক্ষিত প্রার্থীর ফল ও শিক্ষকের জমা দেয়া সনদের ফলেও গরমিল আছে। যেহেতু শিক্ষক জাকির হোসেন নিজেকে প্রকৃত প্রার্থী বলে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি তাই তার সনদটি জাল বলে নিশ্চিত হয়েছে এনটিআরসিএ। তাই, জালসনদধারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্কুলের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ৪ এপ্রিল এনটিআরসিএর জানিয়েছিল তিনি তার অ্যাডমিট কার্ড দেখাতে পারেননি। পরে ৬ এপ্রিল তিনি জিডি করে বলেছেন তার অ্যাডমিট কার্ড ওই দিনই হারিয়ে ফেলেছেন। এতে বোঝা যায় তিনি অসত্য তথ্য দিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তিনি যেহেতু প্রকৃত প্রার্থী হিসেবে কোন প্রমাণ দেখাতে পারেননি তার নামে কোন সনদ ইস্যু করা সম্ভব নয়।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE   করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ - dainik shiksha শিক্ষককে পিটিয়ে হ*ত্যা, চাচাতো ভাইসহ গ্রেফতার ৩ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048961639404297