জাল সনদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের তদন্তে গড়িমসি

জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধি |

নীলফামারীর জলঢাকার দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জাল সনদে প্রধান শিক্ষক পদে সভাপতির ছেলে কাঞ্চন কুমার রায়কে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠলে তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলো জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। সরেজমিনে অভিযোগ খতিয়ে দেখলেও তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা দেননি দায়িত্ব পাওয়া কর্মকর্তারা। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে তার গড়িমসি করছেন বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। 

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় জাল সনদ দিয়ে নিজের ছেলে কাঞ্চন রায়কে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন স্কুলটির তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সভাপতি উলিক চন্দ্র রায়। নিয়োগের ৬ বছর পর সেই শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেন প্রধান শিক্ষক ছেলে। অনুসন্ধানে এমনি তথ্য হাতে এসেছে।

এ নিয়ে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক শিক্ষাডটকম এবং ২০ ডিসেম্বর দৈনিক আমাদের বার্তা পত্রিকায় ‘জাল সনদে সভাপতির ছেলেকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। দুই উপজেলার দু’জন সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে এ তদন্ত কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় তাদের। আদেশ পাওয়ার কয়েকদিন পর সরেজমিনে দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করে আসেন তদন্ত কমিটি। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মৌখিক বা লিখিতভাবে তদন্ত কাজের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন না করে ৩১ কার্যদিবস অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেননি তারা। অজ্ঞাত কারণে তদন্তকাজ আটকে রেখেছেন তদন্ত কমিটি। 

বুধবার পযর্ন্ত তদন্ত  প্রতিবেদন দাখিল হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করে। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও ডিমলা উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম সাজ্জাদুজ্জামান তা রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য জানা যায়নি।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও জলঢাকা উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম আনোয়ারুল কবীর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠনের পর শুধু একদিন সরেজমিনে অভিযুক্ত শিক্ষকের স্কুল থেকে আসার পর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সাজ্জাদুজ্জামান ভাই আমার সঙ্গে আর কোন যোগাযোগ রাখেননি। তবে তদন্ত প্রতিবেদন এখনো জমা না দেয়ার বিষয়টি আমি জেলা শিক্ষা অফিসার স্যারকে জানাবো।

তদন্তে গড়িমসির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তদন্তের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য আমার কাছে তদন্ত কমিটি মৌখিক বা লিখিতভাবে কোনো আবেদন করেনি। তদন্ত কমিটিকে তদন্ত কাজের বিষয়ে তলব করা হবে।

জানা গেছে, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে উপজেলার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় দক্ষিণ সিদ্ধেশ্বরী বানিয়াপাড়া বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত করেন একই এলাকার বাসিন্দা উকিল চন্দ্র রায়। সে বছরের ১৪ নভেম্বর একটি আঞ্চলিক পত্রিকায় ওই স্কুলের ১ জন প্রধান শিক্ষক এবং ৩ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সে সময় দুই পদে মোট ১৭ জন আবেদন করেছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে ন্যূনতম ডিগ্রি পাস থাকার ছিলো। কিন্তু নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ডিগ্রি পাসের একটি জাল সনদে ছেলে কাঞ্চন কুমার রায়কে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ নভেম্বর ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি উকিল চন্দ্র রায়। চাকরিতে যোগদানের পর তৎকালীন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার সুলতানা রাজিয়া সত্যায়িত কাঞ্চন কুমার রায়ের জমা দেয়া ডিগ্রি পাসের সনদটির আইডি নাম্বার যাচাই করে দেখা গেছে, প্রকৃতপক্ষে সেই ডিগ্রি পাসের সনদটি বিকাশ চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তির। পরবর্তীতে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই জলঢাকা উপজেলায় ৩৫টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হয়। গেজেট প্রকাশের পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য যাচাই বাছাইকালে নিজের ডিগ্রি পাস সনদ না থাকায় একটি জাল সনদ দাখিল করেন কাঞ্চন কুমার রায়। 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফল পরিবর্তনের আশ্বাসে আর্থিক প্রতারণা, সতর্ক করলো কারিগরি বোর্ড - dainik shiksha ফল পরিবর্তনের আশ্বাসে আর্থিক প্রতারণা, সতর্ক করলো কারিগরি বোর্ড সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার দাবি মর্যাদা রক্ষা কমিটির - dainik shiksha অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার দাবি মর্যাদা রক্ষা কমিটির নবীন সরকারি কর্মকর্তাদের সৎ থাকার আহ্বান জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha নবীন সরকারি কর্মকর্তাদের সৎ থাকার আহ্বান জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা পাচ্ছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব - dainik shiksha জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা পাচ্ছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে - dainik shiksha সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ - dainik shiksha মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024900436401367