জাল সনদে স্ত্রীকে এমপিওভুক্ত করা অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি |

সাতক্ষীরার অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানে বিরুদ্ধে বিস্তর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন কলেজের সভাপতি আবুল হোসেন মো. মকছুদুর রহমান। সভাপতির অভিযোগ, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে অধ্যক্ষ কলেজের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ১৮টি কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে জাল সনদে অসংখ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করেছেন।   এমনকি মাস্টার্সের সনদ জালিয়াতি করে নিজের স্ত্রীকে কলেজের প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করেছেন। এসব অভিযোগে বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানকে ‘শিক্ষাদস্যু’ আখ্যা দিয়ে তার শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সভাপতি।

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখছেন এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন মো: মকছুদুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের আব্দুল মোতেলেব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে কলেজের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবুল হোসেন মোঃ মকছুদুর রহমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে শাস্তির দাবি জানান।

আরও পড়ুন : দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে সাতক্ষীরার বিনেরপোতায় নিজস্ব এক একর জমির ওপর বাবার নামে এ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। প্রতিষ্ঠার সময়ে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বপান তালার মিঠাবাড়ী গ্রামের মৃত শেখ আব্দুল গণির ছেলে মো. আখতারুজ্জামান। কলেজে যোগদানের পরে সভাপতি পদ থেকে আমাকে বাদ দিয়ে যখন যার প্রয়োজন তাকে সভাপতি বানিয়ে শুরু করে তার অনিয়ম দুর্নীতির কার্যক্রম। তৎকালীন সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ও অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে সংরক্ষিত তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করে। আমি সভাপতি হওয়ার পর আদালতে মামলা করি।

তিনি আরও বলেন, আখতারুজ্জামান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ শেষ বর্ষের সনদ জালিয়াতি করে তার স্ত্রী সেলিনা সুলতানাকে প্রভাষক পদে চাকরি দিয়ে এমপিওভুক্ত করেছেন। সে সরকারি বেতন উত্তোলন করেছে।  নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে দীর্ঘ ৬মাস বিনা ছুটিতে কলেজে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। এসব অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রীর নেয়া টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত ও প্রয়োজনে মামলা করতে যশোর শিক্ষাবোর্ডকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

দৈনিক শিক্ষা পরিবারের নতুন সদস্য ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

মকছুদুর রহমান বলেন, কলেজ পরিদর্শক অমল কুমার বিশ্বাস অভিযুক্ত অধ্যক্ষ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করতে গভর্নিং বর্ডির সভাপতিকে নির্দেশনা দিলে আমি আদালতে তার বিরুদ্ধে সনদ জালিয়াতির অভিযোগে ফৌজদারী মামলা দায়ের করি। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে চার বছরের ভূয়া ছুটি নিয়ে কলেজে অনুপস্থিত থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করায় অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানের বেতন বন্ধের সুপারিশ করেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ এপ্রিল গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্তের পর সে কলেজের প্যাড, সিল ব্যবহার করে ভুয়া স্মারক দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে দরখাস্ত দিচ্ছে। বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা হুমকি দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কক্ষের তালা ভেঙে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে কলেজের অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে হয়রানির চেষ্টা করছে এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে খুন জখমের হুমকি অব্যাহত রেখেছে। 

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আখতারুজ্জামান বিভিন্ন সময়ে কলেজের স্নাতক স্তরের ২২জন শিক্ষক কর্মচারীর কাছ থেকে এমপিওভুক্তির নামে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। আখতারুজ্জামান ভূয়া কাগজ পত্র তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে আরও ১৮টি কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকটিতে জাল সনদে অনেকে চাকরি দিয়েছেন। 

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলঙ্কমুক্ত করতে শিক্ষাদস্যু, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সভাপতি আবুল হোসেন মো. মকছুদুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, গভনিং বডি বিদ্যুৎসাহী সদস্য মীম সাইফুল ইসলাম, সফিকুল ইসলাম, দাতা সদস্য ফিরো রহমান, প্রভাষক সুশান্ত কুমার মন্ডলসহ কলেজের অন্যান্য শিক্ষক ও কর্মচারীরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ - dainik shiksha অবসর কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার ফের তাগিদ সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা - dainik shiksha সুধা রানী হাদিসের শিক্ষক পদে : এনটিআরসিএর ব্যাখ্যা শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে - dainik shiksha শরীফ-শরীফার গল্প বাদ যাচ্ছে পাঠ্যবই থেকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ - dainik shiksha এক রুমে ৩৫ ছাত্রী অসুস্থ, পাঠদান বন্ধ যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে - dainik shiksha যৌ*ন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষক কারাগারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004871129989624