জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা

মুহম্মদ দিদার |

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নানান ধরনের অপপ্রচার চালু আছে। যেগুলো প্রচার পাওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মর্যাদাহানিকর, এমনকী দেশের জন্যও লজ্জাজনক। ৪৫ বছরে হাঁটিহাঁটি পা পা করে ঐতিহ্যকে গড়ে তুলেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রায় মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি আঁঁকড়ে ধরে আছে জাহাঙ্গীরনগরের মাটি। দেশের অনেক কৃতী সন্তান গড়ে ওঠার পেছনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি, আলো-বাতাসের অনেক অবদান রয়েছে।

কখনো কোনো অন্যায়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি আশ্রয় দেয়নি। নিপীড়নবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত। জাবি সম্পর্কে প্রচলিত বড় একটি মিথ্যাচার হলো— এখানকার মেয়েরা ভালো না। যাঁরা এই কথাটি বলেন তাঁরা ভালো-খারাপের মানদণ্ড কী দিয়ে নির্ধারণ করেন সেটা আমার জানা নেই। এখানকার মেয়েরা ধর্ষককে ক্যাম্পাস থেকে স্বহস্তে বিতারিত করে, এইজন্য খারাপ?

এখানকার মেয়েরা নিপীড়নকারীর বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়—‘জাহাঙ্গীরনগরের মাটিতে নিপীড়নকারীর ঠাঁই নাই।’ এইজন্য খারাপ? আন্দোলনরত ছাত্রীদের ভিসি যখন প্রশ্ন করেন— কে ধর্ষিত হয়েছ? তখন সবাই একসঙ্গে বলে ওঠে— আমরা ধর্ষিত হয়েছি। এইজন্য খারাপ? ব্যাচম্যাট, সিনিয়র-জুনিয়ররা নির্বিঘ্নে ছেলে বন্ধুটির সঙ্গে রাত দশটা পর্যন্ত ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে পারে, এইজন্য খারাপ?

জাবি সম্পর্কে আরেকটি অসত্য কথা হলো এখানকার পরিবেশ নিয়ে। বলা হয়ে থাকে নোংরামির জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ জাবিতে। কিন্তু এখানে কেউ না এলে কখনোই বুঝবেন না জাবির পরিবেশ কতটা সংস্কৃতির অনুকূলে।

আরেকটি বড় অসত্য কথা প্রচলিত র্যাগিং নিয়ে। থ্রি ইডিয়ট আর টেবিল নাম্বার ২১ মুভি দেখে র্যাগিংয়ের অনেক কাহিনিই বানানো যায়। র্যাগিং নিয়ে যত নোংরাভাবে প্রচারণা করা হয় ততটা সত্য নয়। অবশ্য র্যাগিং কিছুটা প্রচলিত আছে, কিন্তু এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদও আছে। একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই অপেক্ষায় থাকে কখন পরিবারে আরেকজন কনিষ্ট সদস্য এসে যুক্ত হবে। এমন অনেকেই আছেন পরীক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে নিজেকে বারান্দায় থাকতে হয়েছে, অথবা রাতে না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিতে হয়েছে।

বোধ করি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বর্তমানে প্রচলিত সবচেয়ে বড় অসত্য কথা হলো এটা একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের বাছাই করা ছাত্ররাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। যে ছাত্রটির প্রথম বছরই সিট পাওয়ার কথা ছিল, সে থাকে ডাইনিংয়ে ৮৫ জনের সঙ্গে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্র হলে সিট পাবে ফাইনাল ইয়ারে উঠে। অনেকেই এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়, কিন্তু মোটেও এটা স্বাভাবিক নয়। প্রতিষ্ঠাকালে প্রত্যেক ছাত্রের জন্য একটি করে সিট বরাদ্দ ছিল।

কিন্তু এখন সিট না পাওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এক্ষেত্রে লজ্জাজনকভাবে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সিট সংকটের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে সেশনজট। একটি ব্যাচকে বের করে না দিয়ে আরেকটি ব্যাচকে ভর্তি করানো হচ্ছে। সিট সংকটের আরেকটি কারণ হচ্ছে ক্যাম্পাসের কিছু সিনিয়র, যাদের মাস্টার্স শেষ হওয়া সত্ত্বেও হল ত্যাগ না করার মানসিকতা। আরেকটি কারণ হচ্ছে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের দখলদারিত্ব। এখানেও প্রশাসন ব্যর্থ। যেটা স্বাভাবিক সংকট সেটা মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু কৃত্রিম সংকটকে মেনে নেওয়া মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয়। এত সিট সংকটের মধ্য দিয়েও কিভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা যায়?

লেখক: শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058510303497314