জিপিএ-৫ বিলুপ্তির পর যেভাবে হবে নতুন গ্রেড বিন্যাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি), সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় প্রতি পাঁচ নম্বর ব্যবধানে জিপিএ পরিবর্তন হবে। এছাড়া বর্তমান পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ নম্বরের জিপিএ-৫ কমিয়ে তা জিপিএ-৪ গ্রেড করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

পাবলিক পরীক্ষায় বিশ্বের সঙ্গে আমাদের (বাংলাদেশ) নম্বরের শ্রেণি ব্যাপ্তি সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ফলাফল পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন পদ্ধতিতে জিপিএ-৫ পরিবর্তন করে সর্বোচ্চ জিপিএ-৪ এবং বর্তমানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বরে জিপিএ-৫ দেয়ার পদ্ধতি থাকছে না। পরীক্ষার ফলের পাঁচ নম্বর ব্যবধানে গ্রেড পরিবর্তন করা হবে।

প্রস্তাবনায় নতুন গ্রেড হিসেবে দেখা যায়, পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর ১০০ রাখা হয়েছে। তবে জিপিএ-৫ পরিবর্তন করে তা জিপিএ-৪ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১০০ থেকে ৯৫ নম্বর পেলে নতুন গ্রেড হিসেবে 'এক্সিল্যান্ড গ্রেড' যুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী পাঁচ নম্বর কম ব্যবধানে 'এ প্লাস', 'এ', 'এ মাইনাস', 'বি প্লাস', 'বি', 'বি মাইনাস', 'সি প্লাস', 'সি', 'সি মাইনাস', 'ডি প্লাস', 'ডি', 'ডি মাইনাস', 'ই প্লাস', 'ই' এবং 'ই মাইনাস' গ্রেড দেয়া হবে।

অকৃতকার্য বা ফেল হিসেবে থাকছে 'এফ' গ্রেড। সর্বনিম্ন পাস নম্বর ৩৩ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব গ্রেডের সঙ্গে সমন্বয় করে সর্বোচ্চ জিপিএ-৪ থেকে পরবর্তী গ্রেড নির্ধারণ করা হবে। তবে পাস নম্বর ৪০ বা তার কম করা যায় বলেও প্রস্তাব করা হয়েছে। যদিও এটি ৩৩ নম্বর রাখার পক্ষে অধিকাংশ বোর্ড চেয়ারম্যান মতামত দিয়েছেন।

এদিকে আরেক প্রস্তাবে বর্তমান পদ্ধতিতেই সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ৯৫ পর্যন্ত পেলে জিপিএ-৪, অর্থাৎ গ্রেড হবে 'এ প্লাস'। এখানেও পর্যায়ক্রমে ৫ নম্বর ব্যবধানে গ্রেড পরিবর্তন হবে। তবে সর্বোচ্চ গ্রেড থাকবে জিপিএ-৪।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, 'আমাদের পাস নম্বরের সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশের নম্বরের শ্রেণি ব্যাপ্তি সমস্যা রয়েছে। এ কারণে আমাদের শিক্ষার্থীরা যখন বিদেশে যান তখন তাদের সনদের সমতা নির্ণয়ে বিড়াম্বনায় পড়তে হয়।'

তিনি দাবি করেন, পাশাপাশি বর্তমান গ্রেড পদ্ধতির মাধ্যমে কিছু জটিলতা রয়েছে। ১০০ পেলেও একজন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাচ্ছে, আবার ৮০ পেলেও একই গ্রেড দেয়া হচ্ছে। এ পদ্ধতির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব বিষয় আমলে নিয়ে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি তিন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে গ্রেড পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেড পদ্ধতি চালু হয়। সেখানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৫, লেটার গ্রেড 'এ প্লাস'। এটাই সর্বোচ্চ গ্রেড। এরপর ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৪, লেটার গ্রেড 'এ'। ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩ দশমিক ৫০, লেটার গ্রেড 'এ মাইনাস'। ৫০ থেকে ৫৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ৩, লেটার গ্রেড 'বি'। ৪০ থেকে ৪৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ২, লেটার গ্রেড 'সি'। ৩৩ থেকে ৩৯ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ১, লেটার গ্রেড 'ডি'।

এ ছাড়া শূন্য থেকে ৩২ পাওয়া শিক্ষার্থীদের গ্রেড পয়েন্ট জিরো, লেটার গ্রেড 'এফ', অর্থাৎ ফেল বা অকৃতকার্য। জিপিএ-১ অর্জন করলেই তাকে উত্তীর্ণ হিসেবে ধরা হয়। কোনো বিষয়ে 'এফ' গ্রেড না পেলে চতুর্থ বিষয় বাদে সব বিষয়ের প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্টকে গড় করেই একজন শিক্ষার্থীর লেটার গ্রেড নির্ণয় করা হয়। তবে সব বিষয়েই ৮০-র ওপরে নম্বর পাওয়া ফলকে অভিভাবকরা গোল্ডেন জিপিএ-৫ বলে থাকেন। তবে শিক্ষা বোর্ডে এ ধরনের (গোল্ডেন জিপিএ-৫) কোনো গ্রেড নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রস্তাবিত গ্রেড পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে। গ্রেড নম্বর দেখেই একজন শিক্ষার্থীর ফলের স্ট্যান্ডার্ড বোঝা যাবে। বিষয়টি নিয়ে সকল বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একাধিক সভা করে একমত হয়েছেন। আগামী ২৩ জুন শিক্ষামন্ত্রীর হাতে এ প্রস্তাবনা তুলে দেয়া হবে। তিনি অনুমোদন দিলে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039691925048828