জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহতদের মধ্যে আরো ২৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম।
সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল পরিদর্শনের পর বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা জানান।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে তিনজনকে ইতোমধ্যে বিদেশে পাঠানো হয়েছে ডাক্তারের পরামর্শে। আরো দুজনের কথা বলা হচ্ছে, তারাও যাবেন। এরপর আরো ২৫ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। আমার মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি হচ্ছে আহতদের চিকিৎসা। এ আন্দোলনে অনেকে শহিদ হয়েছেন। তাদের জন্য সরকারের একটা বরাদ্দ আছে, সেটা তারা পেয়ে যাবেন।’
আন্দোলনের সময় আহত হয়ে যারা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন তাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেকে দুই চোখই হারিয়েছেন। এ পৃথিবীটাকে তারা আর দেখতে পারবেন না। তাদের সুচিকিৎসার জন্য চীন, নেপাল, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা হয়েছে। ৫০ জনের চোখের কর্নিয়া নেপাল রেডি রেখেছে। ইতোমধ্যে দুজনের চোখে সফলভাবে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।’
উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আন্দোলনে অনেকে হাত হারিয়েছেন, অনেকে পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। আহতদের অনেকে নানান ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। এটা শুধু মন্ত্রণালয়ের বিষয় না, এটা আমাদের পুরো জাতির বিষয়।’
এর আগে, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, শিশু বিভাগ, আইসিইউ, ইসিজি, অবজারভেশন রুম, ল্যাবসহ বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতে বহুমুখী সমস্যা আছে। বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকগুলিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নার্সের সংকট রয়েছে। যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। অনেক জায়গায় এম.আর.আই মেশিন, এক্সরে মেশিন নষ্ট। এসব সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
কোভিডকালীন ডাক্তারদের অবদানের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘কোভিডকালীন পরিস্থিতিতে ডাক্তাররা যে সেবাটা দিয়েছেন, অনেক ডাক্তারও কোভিড আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, আমরা তাদের স্মরণ করি না। কিন্তু তারা অনেক দিয়েছেন জাতির জন্য। বৈষম্যের যে কথা উঠে এসেছে সেটা নিয়ে আমি বলব শুধু ডাক্তাররা নয়, নার্সরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের হয়েছে। অনেকে এসে আমাকে বলেছেন ১৭ বছর ধরে চাকরি একই পদে চাকুরি করছেন। এটাতো হওয়া উচিত না। একটা মানুষের যদি কর্মস্পৃহা জাগাতে হয় তাহলে তাকে পথটা দেখিয়ে দিতে হবে।’
এছাড়া পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) অং সুই প্রু মারমাসহ প্রমুখ।