জুয়া খেলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, চাকরি দেয়ার নামে টাকা হাতানোর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

তিনি একজন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। ৩৩তম বিসিএস। মূল পদ সরকারি কলেজের প্রভাষক কিন্তু দুর্নীতির দূর্গখ্যাত শিক্ষা ভবনের  মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। গোপালগঞ্জে বাড়ী তার। গত ৪/৫ বছরে ক্যাসিনো খেলে কয়েককোটি টাকা আয়-ব্যয় করেছেন।  এই সময়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কমপক্ষে ৪০ জন কর্মকর্তার কাছ থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা ধার নিয়েছেন। কমপক্ষে ২৫ জনকে টাকা ফেরত দেননি। ফেরত না দেয়া টাকার পরিমান আনুমানিক ১৫ লাখ। আর চাকরি দেবার নাম করে মানুষের কাছ থেকে নেয়া টাকার পরিমান কমপক্ষে দুই কোটি। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। 

জানা যায়, কমপক্ষে ৩০ জন মানুষ তার কাছে ১ কোটির বেশি টাকা পান। এই মানুষরদেরকে শিক্ষাসহ বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেবার কথা বলে টাকা নিয়েছে গত কয়েকবছরে। কিন্তু চাকরি দিতে পারেননি অধিকাংশকেই। নিজেকে ক্ষমতাবান প্রমাণ করতে, চাকরিপ্রত্যাশী কারো কাছে বলেছেন সপ্তাহে দু’বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার দেখা হয়। কারো কাছে বলেছেন, শিক্ষা সচিব ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার দেয়া তালিকা অনুযায়ীই চাকরি দেন। সবাই তার হাতের মুঠোয়। শুধু শিক্ষাই নয়, অন্তত দশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব রয়েছেন যাদের কাছে ইজি এ্যাকসেস রয়েছে তার। এসব কথায় বিশ্বাস করে যারা তাকে চাকরির জন্য টাকা দিয়েছিলেন তাদের বেশিরভাগই এখন টাকা ফেরত পেতে তার পেছনে ঘুরছেন। আর শিক্ষা ক্যাডারের সিনিয়র ও জুনিয়র সহকর্মীদের কাছে বলেছেন তার সন্তান অসুস্থ তাই চিকিৎসার জন্য টাকা দরকার। কাউকে তিনমাস কাউকে দুইমাস পরে ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও তিনচার বছরেও তা ফেরত না দেয়ায় অভিযোগ। একজন দুজন করে এখন সবাই জানেন তার কথা। কিন্তু ক্যাডারের কেউ কিছু বলছেন না ক্যাডারের মর্যাদাহানির কথা ভেবে। কেউ ভয়ে। গোপালগঞ্জের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ তাই কোন দিক থেকে কি ক্ষতি করে সেই ভয়েও  টাকা ফেরত চাননা তার অধিকাংশ সহকর্মী। মাঝে মাঝে মাতাল অবস্থায় পাঁচ তারকা হোটেলের সামনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার দেয়া ফেসবুকের স্ট্যাটাস শেয়ার করেন। কখনো তোফার দেয়া স্টাটাস।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা টাকা ধার দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, অনেক দেরিতে তারা জেনেছেন যে সে ক্যাসিনো খেলে টাকা খুইয়েছেন। প্রথমে জানতেন অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার জন্য টাকা ধার নিচ্ছেন। আবার ক্যাডারেরই কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনদের নিম্নপদে চাকরির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। কেউ কেউ চাকরির জন্য দেয়া ঘুষের টাকার জিম্মাদার হয়েছেন। কেউ আবার সাক্ষী হয়েছেন। জিম্মাদার বা সাক্ষী সবাই এখন বিরক্ত তার ওপর। সাবর কাছে ক্যাসিনো .....হিসেবে পরিচিত তিনি। 

২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে যখন ছাত্রলীগ নেতা ছিলো, চাকরিতে যোগদান করেনি তখনই  চাকরি দেবার নাম করে কমপক্ষে ২০ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে সে। চাকরিতে যোগদানের পর ঘুষের রেট বেড়েছে। 

চাকরি দেবার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ বর্তমান ও সাবেক শিক্ষাসচিব এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের বর্তমান ও সাবেক মহাপরিচালকদের কাছে দেয়া হয়েছে। অন্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কিংবা অতিরিক্ত সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব কিংবা অতিরিক্ত সচিবের কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন একাধিকবার। চাকরি দেবার নামে টাকা নিয়ে চাকরি না দেয়া কয়েকজন লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন শিক্ষা সচিব বরাবর। শিক্ষা অধিদপ্তরে দুই/তিনজন পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা হয়েছে অসংখ্যবার। শিক্ষা অধিদপ্তরের আইন শাখায়ও অভিযোগ জমা। কয়েকডজন উকিল নোটিশ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এগুলোর অধিকাংশ মামলা হবে। চেক ডিজঅনার ও প্রতারণার মামলা হয়েছে অসংখ্য।  শিক্ষাখাতের দ্বিতীয় শাহেদ হিসেবে খুব শিগগিরই মিডিয়ায় তার নাম আসবে। শিক্ষাখাতের প্রথম শাহেদ শিক্ষাভবনেই রয়েছে।    

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঘুষের টাকা ফেরত চাইলে কখনো ছাত্রলীগের ভয়, কখনো পুলিশের ভয়, কখনো মামলার ভয় দেখানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সাংবাদিকদের কাছে তথ্য ফাঁস করলে টাকা ফেরত না দেয়ার হুমকি দিয়েছেন কয়েকজনকে।  টেলিফোনে করা তার প্রায় সব বক্তব্য ও প্রতিশ্রুতি রেকর্ড করে রাখছেন প্রতারিত কয়েকজন। রেকর্ড করা বক্তব্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কয়েকজনকে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের নম্বর থেকে ফোন করেন তিনি। তার দেয়া কয়েকডজন চেক ডিজঅনার হয়েছে গত দেড় বছরে। চেক ডিজঅনারের মামলায় আদালতে আত্মসমর্পন করেছেন। ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের গালমন্দ করে শিক্ষা ক্যাডার সমিতির বিতর্কিত নেতাদের স্নেহভাজন হয়েছেন গত দুইতিন বছরে। ছাত্রজীবনে পোস্টেড ছাত্রলীগার হলেও কর্মজীবনে এখন শিক্ষা ভবনের জামাত-বিএনপিপন্থীদের সঙ্গে সখ্য। তাদের সঙ্গে মিলেমিশে টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য,  এমপিওবাণিজ্য করার অভিযোগ মৃদুভাষী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।  

চাকরির জন্য টাকা দিয়ে প্রতারিত কয়েকজন দৈনিক শিক্ষাকে বলেছেন বিতর্কিত এই কর্মকর্তার স্ত্রী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। 

দৈনিক শিক্ষার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক স্ত্রী খুবই মর্মাহত হবেন। এলকায় আমাকে সবাই বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে জানে। শিক্ষা ভবনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছি মানুষকে চাকরি দিতে পারি এমনটাই জানেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা ছিলাম। দয়া করে আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়েন না। করলেও আমার নামটা দিয়েন না, আমার সন্তানটা গুরুতর অসুস্থ।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062990188598633