জেলা নেতাদের কারণে ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ ঘটছে: সুজন

সাগর আনোয়ার |

বৃহৎ এই সংগঠনে অনেকে বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে খোলস পালটে আমাদের সংগঠনে অনুপ্রবেশ করতে চায়। সংগঠনকে বিতর্কিত করতে চায়। তবে, আমরা যখনই জানতে পারছি সঙ্গে-সঙ্গেই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। দৈনিক শিক্ষাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন ছাত্রলীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নওশেদ সুজন। নওশেদ সুজন সিলেটের বাসিন্দা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রাজনীতি থেকে রাজনীতিতে যাত্রা। এরপর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রভাবশালী সম্পাদকও নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে ছাত্রলীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী, সারাদেশের সাংগঠনিক কার্যক্রম, ছাত্রলীগের সহিংসতা ও ক্যাম্পাসের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এ নেতা কথা বলেছেন দৈনিক শিক্ষার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক সাগর আনোয়ার।

প্রশ্ন : ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী কেমন হল?

এক কথায় অসাধারণ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেছে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন ও মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটনের নেতৃত্বাধীন কমিটি একটি পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করেছিল। এবারের অনুষ্ঠান অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে জাকজমকপূর্ণ হয়েছে। বিশেষ করে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের অসাধারণ আবেগময় বক্তব্য প্রত্যেক মুজিবপ্রাণ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীর হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। আমি বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাও এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগদান করে সন্তুষ্ট হয়েছেন।

প্রশ্ন : সম্প্রতি বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নিজেমের মধ্যে সহিংসতা সংগঠনের ভালো কাজগুলোকে আড়াল করে দিচ্ছে কি না?

নওশেদ সুজন: ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি গঠনের পর সারাদেশে ছাত্রলীগে নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি। কিছু জায়গায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এটা বড় যেকোনো সংগঠনেই থেকে থাকে। তবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতার মধ্যে যারা বিচ্ছিন্ন ছোটো-খাটো সহিংসতায় জড়িয়েছে তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা কলেজের আহ্বায়ক, একাধিক যুগ্ম আহ্বায়কসহ ১৯ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ধরতে গেলে সেখানে এখন কমিটিই নেই। ছাত্রলীগে থেকে সহিংসতা করে পার পাওয়া দুষ্কর।

প্রশ্ন: ছাত্রলীগে অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের অনুপ্রবেশ ঘটছে কেন?

সত্যি কথা বলতে, ছাত্রলীগ একটি বিশাল ছাত্র সংগঠন। আমার মনে হয়, পৃথিবীতে সক্রিয় এতো বড় ছাত্রসংগঠন আর একটিও নেই। তাই অনেকে বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে খোলস পাল্টে আমাদের সংগঠনে অনুপ্রবেশ করতে চায়। সংগঠনকে বিতর্কিত করতে চায়। তবে, আমরা যখনই জানতে পারছি সাথে সাথেই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মুন্সীগঞ্জে একজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছিল আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, যার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। যাদের ব্যাপারে ন্যূনতম সন্দেহ থাকছে তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এছাড়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের কারণে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটগুলোতে ছোট-খাটো পদে ভিন্ন মতাবলম্বীদের চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে আমরা খবর পাওয়ার সাথে সাথেই তাদেরকে বহিষ্কার করছি। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কারও অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই।

প্রশ্ন: কমিটি পূর্ণাঙ্গের শুরুতেই যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য আপনারা কোনও ব্যবস্থা নিয়েছেন কি?

তৃণমূল তো বিশাল জায়গা। এখানে সবার খোঁজ-খবর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে নেওয়া সম্ভব হয় না। কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার আগে সকল নেতাদের পারিবারিক খোঁজ খবর পর্যন্ত নেওয়া হয়। তবে তৃণমূলে তা হয়ে উঠে না। এটা তৃণমূলের আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ কারণেই ঘটে থাকে। তবে এখন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।  সকল ইউনিটের নেতাদের পূর্ণাঙ্গ বায়োডাটা সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করে কমিটি ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: অনেক সময় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন হয় কিন্তু তা আলোর মুখ না দেখার অভিযোগ রয়েছে।

তদন্ত কমিটি আলোর মুখ দেখে না এটা ভুল। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই তো আর তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না। তদন্ত কমিটি  তো আর মনগড়া প্রতিবেদন দিতে পারে না। আমরা সবার সাথে কথা বলি, তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করি তার পর সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রের কাছে দাখিল করি। তাই একটু দেরি হয়। কিন্তু ছাত্রলীগ তদন্ত কমিটি করেছে আর তা আলোর মুখ দেখেনি এটা ভুল। যেমন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ও ডুয়েটের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকেই কেন্দ্র ইতোমধ্যে ব্যবস্থাও নিয়েছে।

প্রশ্ন : জেলায় জেলায় আপনাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছেন। আপনারা কি ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন?

অবশ্যই। এটা ছাত্রলীগের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এজন্য আমরা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই। ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের সফলতার জন্য এই কমিটির কৃতিত্ব অনেক। এই কমিটি জেলায় জেলায় এবং বিভিন্ন ইউনিটে গিয়ে কর্মীসভা করেছে। এ কারণে পুনর্মিলনী সভায় বিপুল সংখ্যক ছাত্রের সমাবেশ ঘটেছিল।

প্রশ্ন : ছাত্রদল ক্যাম্পাসে নেই। বিষয়টিকে কিভাবে দেখেন?

তরুণ প্রজন্ম ছাত্রদলের নামও জানে না এখন। আর ছাত্রদলে তো ছাত্রই নেই। সবগুলোই অছাত্র। যাদের বয়স ৪০ তারা কিভাবে নিয়মিত ছাত্র হয়। ৪০ বয়সী লোকগুলো ক্যাম্পাসে এসে কি করবে? এরা বছরে একটা বিভাগীয় রি-ইউনিয়নে আসতে পারেন। এখন ২৫ বছরেই একজন ছাত্রের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যায়। ছাত্রদলের নামধারীরা ক্যাম্পাসে আসলেই মারামারি হবে, সংঘর্ষ হবে। কেননা, তাদের তো পড়াশোনা করতে হয় না। তাই এই বহিরাগতগুলো ক্যাম্পাসের বাইরে আছে এটাই সবার জন্য স্বস্তিদায়ক। এরা ক্যাম্পাসে আসলেই শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়।

প্রশ্ন : জামাতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবির তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সরকার ও দেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। আপনারা এ সম্পর্কে কিছু জানেন?

জানবো না কেন? আমরা শুরু থেকেই এদের এইসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়ছি। ওদের পূর্বসূরীরা তো দেশের বিরুদ্ধেই অবস্থান নিয়েছিল। এখন তারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে এটাই তো স্বাভাবিক। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো আপত্তিকর কিছু পেলেই সাথে সাথেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাচ্ছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030241012573242