জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মেয়েসহ ৪০ শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (ডিপিও) মেয়েসহ ২০১৫ সালের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বৃত্তি পাওয়া ৪০ শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়েছে। তাদের স্থলে নতুন ৪০ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ার পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বৃত্তির ফলাফলের এই পরিবর্তন করা হয়েছে।

গত সোমবার বিকেলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংশোধিত ফলাফল এসে পৌঁছেছে। প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক আবুল খায়ের বলেন, গতকাল মঙ্গলবার তাঁরা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলোতে সংশোধিত ফলাফল পাঠিয়ে দিয়েছেন।

সংশোধিত ফলাফলে বলা হয়েছে, নগরের শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল, যার সব কটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েকজন শিক্ষকনেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তির সন্তান পড়ত। বৃত্তি বাবদ তোলা টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দিতে বলা হয়েছে।

অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ জুন ‘রাজশাহীতে পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তির ফল জালিয়াতি’ শিরোনামে প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর গত জুলাইয়ে রাজশাহীতে এসে এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সাইফুল ইসলাম তদন্ত করেন। গত ১৭ জুলাই মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তিনি। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি তিন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর সংশোধিত ফলাফল প্রকাশের জন্য রাজশাহীতে অভিভাবকেরা সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রথম আলোতে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গতকাল বিদ্যালয়গুলোতে পাঠানো ফলাফলের কপি থেকে জানা গেছে, ১১ এপ্রিল এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, আগে বৃত্তি পেয়েছিল এমন ৪০ জন শিক্ষার্থীর বৃত্তি বাতিল করা হয়েছে। যাদের ৩০ জন ট্যালেন্টপুল ও ১০ জন সাধারণ গ্রেডের বৃত্তি পেয়েছিল। বাতিলের তালিকায় রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কাশেমের মেয়ের ট্যালেন্টপুলে পাওয়া বৃত্তিও রয়েছে। অবশ্য আবুল কাশেম এর আগে দাবি করেছিলেন, তাঁকে বিতর্কিত করার জন্য তাঁর মেয়ের নম্বরের সঙ্গে কিছু নম্বর যুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর মেয়ে এমনিতেই বৃত্তি পেত। কিন্তু সংশোধিত ফলাফলে তাঁর মেয়ের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন বৃত্তিপ্রাপ্তদের ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে তিন বছরের জন্য বৃত্তি দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীদের সংশোধিত ফলাফল ও জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তির দাবিতে এত দিন অভিভাবকেরা সুশিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের ব্যানারে রাজশাহীতে আন্দোলন করে আসছিলেন। সংগঠনের আহ্বায়ক ফারুক হোসেন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ফলাফল সংশোধন করলেই হবে না। এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁরা দেখেছেন, তদন্ত প্রতিবেদনে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে, নম্বর ফর্দ এবং সমাপনী পরীক্ষার গোপনীয় কাগজপত্র ও কম্পিউটার তৎকালীন বোয়ালিয়া থানা শিক্ষা কর্মকর্তা রাখি চক্রবর্তীর কক্ষে তাঁর নিয়ন্ত্রণে রাখা ছিল। নম্বর টেম্পারিংয়ের কাজটি তৃতীয় কারও পক্ষে করা সম্ভব ছিল না। অথচ এই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038979053497314