সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোচিং ফি’র অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এছাড়া অতিরিক্ত টাকা আদায়ের যৌক্তিকতা দেখিয়ে কোনও রশিদও দেওয়া হচ্ছে না ছাত্র-ছাত্রীদের।
এ বিষয়ে গত বছরও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। আসন্ন এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফরম পূরণেও বাড়তি টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিল আপের সময় কেন্দ্র ফি, স্কুলের উন্নয়ন ও কোচিং ফি জানুয়ারি থেকে অতিরিক্ত ৪ মাসের বেতন বাবদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং মানবিক ও ব্যবসায় বিভাগ ৩ হাজার ১০০ টাকা।
এছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্যদের কাছ থেকে বিভিন্ন হারে জামানত নেওয়া হচ্ছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমরা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছি, কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক ফরম পূরণ করতে হয়, কিন্তু ফরম পূরনের টাকা পরিশোধ করলেও রশিদ পাচ্ছি না।’
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, আমরা পরিবার থেকে টাকা নিয়ে আসি কিন্তু ফরম পূরনের টাকা জমা দিয়ে গেলেও অভিভাবকদের টাকা জামাদানের রশিদ দেখাতে পারি না। অনেক শিক্ষার্থী ফরম পূরণের টাকা পরিশোধের জন্য অভিভাবকরা মহাজনের নিকট হতে চড়া সুদে টাকা সংগ্রহ করে ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করছেন বলে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অভিভাবকরা জানান, একই উপজেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাবে ফি আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়েকথা বলতে গেলে নিজেদের সন্তানের ক্ষতি হবে। তাই মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছি। বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তদারকি করলে এমনটি হতো না বলে তারা জানান। যদিও সরকারে উচ্চ পর্যায় হতে বার বার কোচিং বাণিজ্য ও অতিরিক্ত ফি আদায় বন্ধের নির্দেশ দিলেও উপজেলা পর্যায়ে কোন ভাবে তা বন্ধ হচ্ছে না বলেই মন্তব্য করেন।
সারাদেশে এবার ফরম পূরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাড়তি টাকা আদায় বন্ধ করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মাঠে নেমেছে। নির্ধারিত ফি’র বাড়তি টাকা আদায় করলেই দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ অভিভাবকদের জানাতে বলা হয়েছে। অথচ এত কড়াকড়ির পরও এই উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নোটিস টাঙিয়ে ফরম পূরণকালে কোচিং কিংবা অতিরিক্ত ক্লাসসহ বিভিন্ন ফি’র অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষাবোর্ডের নির্ধারিত ফি’র সঙ্গে উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোচিং কিংবা অতিরিক্ত ক্লাস করানোর অজুহাত দেখিয়ে বাড়তি এক থেকে দুই হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।
হরিপুর বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজির আলী সরকার জানান, ‘বিজ্ঞান বিভাগে ৩,১০০ টাকা, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩,০০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ফরম পূরনের ১,৮৫০ টাকা, ২ মাসের কেচিং ফি ৮ শত টাকা, কেন্দ্র ফি ৩০০ টাকা, ২০১৯ সনের জুন মাস পর্যন্ত মাসিক ফি আদায় করছি, ব্যবহারিক খাতার জন্য ১০০ টাকা, ইন্টারনেট খরচ ১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আমাদের আরও বিভিন্ন খাত আছে এই কারণে আমরা রশিদ দিচ্ছি না।’
রাংপানি ক্যাপ্টেন রশিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিজন চন্দ্র বিশ্বাস ও জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহানা জাফরিন রোজি বলেন, বিজ্ঞান বিভাগে ৩,২০০ টাকা এবং মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ৩,১০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ২ মাসের কোচিং ফি ১ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে, টিফিন খরচ ১০০ টাকা এবং ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস পর্যন্ত মাসিক ফি আদায় করছি। স্কুল পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষকদের যৌথ মতামতের ভিত্তিতে বোর্ড ফি'র অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে তারা দাবি করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোলায়মান হোসাইনের সাথে ফোনে আলাপ করলে তিনি অবাক হয়ে বলেন, কোনওভাবেই অতিরিক্ত ফি নেয়া যাবে না। তার পরও কোন বিদ্যালয় অতিরিক্ত ফি আদায় করলে আমি কিছু জানি না, আমার সাথে হরিপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক আছেন ওনার সাথে কথা বলেন। সরকারি নির্দেশনাটি আমি সকল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি যাতে কেউ অতিরিক্ত ফি আদায় না করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণের নামে অতিরিক্ত ফি আদায়ে কোন অভিযোগ আসেনি, তবে আমরা তদন্ত করছি, সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।