জৌলুস হারাচ্ছে চাখার ফজলুল হক কলেজ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শেরেবাংলার স্মৃতি বিজড়িত চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ জৌলুস হারাচ্ছে। অথচ এক সময় বৃহত্তর দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মভূমি চাখার গ্রামে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক নিজের নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। সোমবার (১৮ নভেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন এসএম গোলাম মাহমুদ রিপন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কলেজটি শিক্ষার গুণগত মান রক্ষা করে আসছিল। স্বল্প খরচে মেধাবী ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দেশ-বিদেশে কাজ করে তারা সুনাম অর্জন করেছেন।

রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপি হওয়ার পাশাপাশি উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের অভাবে কলেজটিতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বর্তমানে চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৯৮০ জন। একাডেমিক ভবন সংকটে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। আবাসিক কোয়ার্টার সংকটে যোগদানের পর অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষকরা অন্য কলেজে বদলি হয়ে যান। ফলে শিক্ষক সংকটে মেধাবী শিক্ষার্থীরা কাঙ্খিত ফলাফল করতে পারছেন না।

প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের অভাবেও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে নির্মিত বিজ্ঞান ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ায় প্রতিটি কক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না।

এছাড়া একটি একাডেমিক ভবনের তৃতীয় তলার কয়েকটি কক্ষকে আবাসন হিসেবে শিক্ষকরা ব্যবহার করায় ক্লাসরুম সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। আবার শিক্ষক কোয়ার্টার না থাকায় শিক্ষক সংকটও কাটছে না। কোটা অনুযায়ী শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী চাখার কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া ১৪ জন সহযোগী অধ্যাপক থাকার কথা।

কিন্তু বর্তমানে সেখানে সাতজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। চলতি বছর ১ অক্টোবর কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছেন অধ্যাপক আবু শাফায়েত মো. হাবিবুল ইসলাম। অধ্যক্ষ হিসেবে কাউকে নিয়োগ না দেয়ায় তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে এ বছর ১ জানুয়ারি থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহযোগী অধ্যাপক মনিমোহন অধিকারী। তিনি বলেন, স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়েই তিনি নিয়মিত ক্লাস করিয়েছেন। ভবন সংকট কাটাতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার আবেদন করা হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

কলেজের অফিস সহকারী মো. আবদুল খালেক ভূঁইয়া জানান, এ কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে ১৫ জনের বিপরীতে ১০ জন, প্রভাষক পদে ২৯ জনের বিপরীতে ১৬ জন রয়েছেন। এছাড়াও লাইব্রেরিয়ান ও সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

এসব পদের শিক্ষক ও একাডেমিক ভবন সংকটে ৯টি বিষয়ে অনার্সের দুই হাজার ও একাদশ শ্রেণির ৫২০ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ৪৬০ শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। কলেজে ছাত্র ও ছাত্রী নিবাস নেই। এ কারণে ভর্তির কোটা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা একাদশ, দ্বাদশ ও অনার্স বিষয়ের শিক্ষার্থীরা আবাসন সংকটে রয়েছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বলেছেন, চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজে একটি নতুন ছয়তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া গেছে। শিগগিরই এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

বরিশাল-২ আসনের এমপি শাহে আলম আরও বলেন, চাখারের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা হবে। জেলা প্রশাসক এসএম অরিয়র রহমান বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ তার কাছে সমস্যার কথা জানালে তিনি সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

শিক্ষার মানোন্নয়নে যা যা করা দরকার সব করা হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদিদ বলেন, ক্লাসরুম সংকটসহ নানা সমস্যা সমাধানে তিনি খুব শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।

কলেজের সাবেক ছাত্র ও বানারীপাড়া পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল বলেন, বর্তমান সরকার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার ওপর ব্যাপক জোর দিয়েছে। কিন্তু চাখার কলেজে আধুনিক শিক্ষার ছোঁয়া লাগেনি। কলেজে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলেও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।

জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সুভাষ শীল আরও বলেন, কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালাইজড করা দরকার। সব বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করাসহ চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজকে তিনি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার দাবি জানান।

কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মোমিনুল কবির মিঠুন বলেন, শিক্ষক সংকটে তারা নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিমোহন বলেন, আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কথা বলতে পারব না।

কিন্তু আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত একটি টাকাও অন্য খাতে খরচ করা হয়নি। তিনি বলেন, কলেজ ও শিক্ষার্থীদের অনুকূলে বরাদ্দ টাকা নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।

চাইলে যে কেউ সেখান থেকে তথ্য জানতে পারেন। ১৯৮০-৮১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও চাখার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খিজির সরদার বলেন, আগে ৩ বছর পরপর ছাত্রসংসদ নির্বাচন হতো।

নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিত। চাখার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খিজির সরদার আরও বলেন, চাখার কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে পরিমল কুণ্ডু সহ-সভাপতি (ভিপি) এবং তিনি সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে কলেজে সর্বশেষ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এবং নির্বাচন পণ্ড হয়ে যায়। এ নির্বাচনের পর থেকে এ কলেজে আর কোনো ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043790340423584