ঝরে পড়াদের শিক্ষাদানের নামে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের একটি সরকারি প্রকল্পে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে একটি এনজিওর বিরুদ্ধে। পাঠদানের কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহ না করেই এবং শিক্ষকদের বেতন না দিয়েই মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেছে ‘নারী বিকাশ কেন্দ্র’ নামে দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই এনজিওর কর্মকর্তারা। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগ, কথিত রিসোর্স পারসন, ট্রেইনার, কর্মকর্তা নিয়োগ ও মাস্টার রোলে ভুয়া স্বাক্ষর দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। শিবচর উপজেলায় ৭০টি কেন্দ্রে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় নারী বিকাশ কেন্দ্র নামে ওই এনজিও। ৪২ মাসের এ প্রকল্পে উপজেলায় মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ১১ মাস অতিবাহিত হলেও বাস্তবে কোথাও পাঠদান করেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কেন্দ্র নির্মাণ, আসবাবপত্র ও উপকরণ সরবরাহের জন্য বহুল প্রচারিত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার কথা থাকলেও মানা হয়নি এ নিয়ম। ঘর নির্মাণ না করে ও উপকরণসামগ্রী ক্রয় না করে অফিস রেজল্যুশনের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। প্রকল্পের প্রায় পুরো টাকা এনজিওটি তুলে নিলেও শুরু থেকে গত ১১ মাসের বেতন-ভাতা পাননি কোনো শিক্ষক।

এ নিয়ে খোদ এনজিওকর্মীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। আবু সালেহ মুসা, খান রুবেলসহ শিবচরের বন্দরখোলা গ্রামের কয়েকজন জানান, কাগজে-কলমে ছাত্রছাত্রী দেখালেও কোনো দিন শিক্ষণ কেন্দ্র খোলা দেখেননি। তাদের কর্মকা- কখনো চোখে পড়েনি। শুধু সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। মূলত সরকারের টাকাগুলো লুটপাট ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না এ প্রকল্পে। রথি নামে প্রকল্পের এক শিক্ষিকা বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত কোনো বেতন-ভাতা পাইনি।’
অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত নারী বিকাশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নাছিমা খাতুন বলেন, ‘শিক্ষকদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে শিক্ষকদের বেতন প্রদান করা হয়।’ অন্যসব অভিযোগও ভিত্তিহীন দাবি করে বিস্তারিত কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

মাদারীপুর জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর সহকারী পরিচালক শুভ বণিক বলেন, ‘একজনের পক্ষে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব হয় না। ছোটখাটো কিছু অনিয়ম আছে। বিল প্রদানের ক্ষেত্রে উপজেলা মনিটরিং কমিটি সুপারিশ করার পর আমরা বিল প্রদান করেছি। এরপরও যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053110122680664