ঝিনাইদহের ৯ প্রাথমিক শিক্ষক লাপাত্তা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি |

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত চার প্রধান শিক্ষকসহ ৯ শিক্ষক লাপাত্তা। মাসের পর মাস কর্মস্থলে তারা অনুপস্থিত। স্কুলে না আসায় বেতন বন্ধ থাকলেও কাগজে-কলমে চাকরিতে বহাল আছেন ছয় শিক্ষক। তবে বাকি তিন শিক্ষককে বিভাগীয় মামলা রুজুর মাধ্যমে এরই মধ্যে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। চলতি মাসে আরও কয়েকজন চাকরিচ্যুত হবেন বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত প্রাথমিকের এসব শিক্ষকের মধ্যে দু'জনের অবস্থানের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া থাকেন আমেরিকায়।

দীর্ঘদিন সেখানে তিনি স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন। কিন্তু এখনও তিনি কাগজ-কলমে চাকরি করছেন।

ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকার খান-এ খোদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উম্মে সালমা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন কানাডায়। এই দুই শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। এভাবে জেলার ৯ শিক্ষকের কাগজে-কলমে চাকরি থাকলেও কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

উল্লিখিত দু'জন ছাড়া বাকি শিক্ষকরা কোথায় আছেন, তার সুনির্দ্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে। এসব শিক্ষকের মধ্যে বেশিরভাগ দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানা গেছে। মহেশপুরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাসরিন আক্তার প্রায় সাত মাস স্কুলে অনুপস্থিত। তিনি কোথায় আছেন তা বলতে পারেননি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু আহসান। তিনি জানান, নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। দ্রুতই তাকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া চলছে।

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের জেহের আলী জোয়ার্দারের ছেলে মতিয়ার রহমান চাকরি করেন তাহেরহুদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি এক বছর ধরে স্কুলে আসেন না। কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনো হদিস নেই। তার মোবাইল ফোনটিও দীর্ঘদিন বন্ধ।

একই উপজেলার দখলপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে শ্রাবণী ইয়াসমিন চাকরি করেন সোনাতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি দেশে থাকলেও কর্মস্থলে আসেন না। এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান বলে জানান হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান।

শৈলকূপার ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন ও কাতলাগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম পিএসসির সুপারিশ করা নন-ক্যাডারে যোগদান করেন। কিন্তু যোগদানের পর থেকেই তারা উধাও। এক দিনও তারা স্কুলে আসেননি।

এর মধ্যে প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২১ মার্চ থেকে ও আলমগীর হোসেন একই বছরের ১৮ জানুয়ারি থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। কোটচাঁদপুর উপজেলার এঁড়েনদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সামছুন্নাহার শিমু এক বছর ধরে কর্মস্থলে নেই।

কোটচাঁদপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বরণ পাল জানান, সামছুন্নাহার শিমু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোনো যোগাযোগ রাখেন না। শিমু অন্য কোনো চাকরি করতে পারেন বলে তিনি জানান।

কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা খাতুন জানান, তার উপজেলায় দামোদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিনুর রহমান দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। যে কারণে তাকে বিধি অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

জেলাব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষকের কর্মস্থলে অনুপস্থিতের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এরই মধ্যে তারা বিভাগীয় মামলা দায়ের করে তিনজনকে চারকিচ্যুত করেছেন। চলতি সেপ্টেম্বর মাসে আরও কয়েকজন চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত হবেন। শৈলকূপায় দু'জন পিএসসির সুপারিশে নন-ক্যাডারে প্রাথমিকে চাকরি পেয়েছিলেন। তাদের ব্যাপারে পিএসসির মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত এলে তারা চাকরি হারাবেন। তিনি বলেন, যারা বিদেশে বা অন্য কোথাও চাকরি করছেন, তাদের বেতন বন্ধ করে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে। হয়তো দু-তিন মাসের মধ্যে তাদেরও চাকরিচ্যুত করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039241313934326