টয়লেটের জন্য বাবাকে পুলিশে দিলো স্কুলছাত্রী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

টয়লেট বা শৌচাগার বানিয়ে দেয়ার কথা দিয়েও সেটি না রাখায় ভারতের সাত বছরের একটি কন্যা শিশু তার বাবার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে।

পুলিশের কাছে একটি চিঠিতে সাত বছরের হানিফা জারা অভিযোগ করেছে যে, তার বাবা তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে, সেজন্য তাকে গ্রেপ্তার করা উচিত।

কারণ বাইরে খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করতে তার অনেক লজ্জা লাগে।

এখনো অনেক ভারতীয় শৌচাগার সুবিধার বাইরে রয়েছে। ইউনিসেফের হিসাবে, ভারতের অন্তত পঞ্চাশ কোটি মানুষ ঘরের বাইরে মাঠেঘাটে বা খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করে থাকে।

পুলিশ স্টেশনে হানিফা, তার বাবা ও মা

তামিলনাডু রাজ্যের আম্বুর নামের একটি শহরে বাবা-মায়ের সঙ্গে বসবাস করে হানিফা। তাদের বাড়িতে কোন টয়লেট বা শৌচাগার নেই।

হানিফা বলেছে, তাদের বাড়ির আশেপাশের কয়েকজন প্রতিবেশীর এই সুবিধা রয়েছে।

তাই বাড়িতে একটি শৌচাগার বানানোর জন্য সে তার বাবাকে বলেছিল। তখন সে নার্সারিতে পড়তো।

''বাইরে গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করতে আমার লজ্জা লাগে। যখন মানুষজন আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, তখন আমার খুব খারাপ লাগে।''

খোলা স্থানে পয়ঃনিষ্কাশনের ক্ষতি সম্পর্কে স্কুলে জানার পর সে এ বিষয়ে আরো বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

পুলিশের কাছে লেখা চিঠিতে হানিফা লিখেছে, তার বাবা তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যদি সে ক্লাসে শীর্ষে ওঠে, তাহলে বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেবে।

পুলিশের কাছে লেখা হানিফার চিঠি

''নার্সারি থেকে আমি আমার ক্লাসে সবচেয়ে ভালো ফল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছি।'' সে লিখেছে।

''আমি এখন দ্বিতীয় অবস্থানে আছি। কিন্তু তিনি শুধু বলেই যাচ্ছেন যে, তিনি টয়লেট বানাবেন। এটা একরকম প্রতারণা, সুতরাং তাকে গ্রেপ্তার করুন।''

হানিফার অনুরোধ, যদি তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে পুলিশ যেন অন্তত তার কাছ থেকে দিনক্ষণ লেখা মুচলেকা নিয়ে রাখে যে, কবে তিনি বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেবেন।

হানিফার বাবা এহসানুল্লাহ বলেছেন, তিনি আসলে শৌচাগারটি বানানোর কাজ শুরু করেছেন, কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে সেটির কাজ শেষ করতে পারেননি। কারণ এখন তিনি কর্মহীন।

''আরো খানিকটা সময় দেয়ার জন্য হানিফাকে আমি বলেছিলাম, কিন্তু সে আমার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ আমি আমার কথা রাখতে পারিনি।''

কিন্তু হানিফার মন তাতে গলেনি।

''একই বিষয় নিয়ে তাকে আমার কতদিন বলতে হবে? তিনি আমাকে একই অজুহাত দিয়ে যাচ্ছেন যে যথেষ্ট টাকা নেই। সেজন্য আমি পুলিশের কাছে গেছি।''

সোমবার মায়ের সঙ্গে সে তার স্কুলের কাছের পুলিশ স্টেশনে গিয়ে হাজির হয়।

পুলিশ অফিসার এ ভালারমাথি বলছেন, ''ব্যাগ ভর্তি করে ট্রফি আর মেধার অনেক সার্টিফিকেট নিয়ে সে থানায় এসে সেগুলো টেবিলে সাজিয়ে রাখতে শুরু করে।

এরপর সে আমাদের জিজ্ঞেস করে, তোমরা কি আমাকে একটি টয়লেট (শৌচাগার) দিতে পারবে?

মি. ভালারমাথি বলছেন, তারা মি. এহসানুল্লাহকে ডেকে পাঠালে তিনি দ্রুত পুলিশ স্টেশনে হাজির হন।

তিনি ভেবেছিলেন যে, তার স্ত্রী আর মেয়ে কোন বিপদে পড়েছে। কিন্তু কি কারণে তাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেটা জেনে তিনি হতবাক হয়ে যান।

হানিফার লেখা চিঠির বিস্তারিত পড়ে মি. এহসানুল্লাহ বলেন, কিভাবে আনুষ্ঠানিক চিঠি লিখতে হয়, সেটা তাকে পর্যবেক্ষণ করে করেই হয়তো হানিফা শিখেছে।

কারণ গ্রামের মানুষজনকে মাঝে মাঝে অফিসের জন্য কাগজপত্র পূরণ করা বা চিঠি লেখার কাজে তিনি সহায়তা করে থাকেন।

''আমি কখনো ভাবিনি, এটা আমার দিকেই আবার ফিরে আসবে,'' তিনি বলছেন।

হানিফার এই চেষ্টা পুলিশ কর্মকর্তাদের সহানুভূতি পেয়েছে।

''তার অভিযোগটি খুব সৎ এবং সরল, তাই আমরা সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেছি।'' বলছেন পুলিশ কর্মকর্তা ভালারমাথি।

তার এই কর্মকাণ্ডে জেলা কর্মকর্তাদের টনক নড়েছে।

এখন তারা হানিফা ও তার প্রতিবেশীদের জন্য পাঁচশোর বেশি শৌচাগার বানানোর জন্য অর্থসংগ্রহ শুরু করেছেন।

''তার অভিযোগটি দেখে আমরা খুবই খুশী হয়েছি। আমরা স্কুলে এরকম ক্লাসের আয়োজন করছি,যাতে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে শৌচাগার বসানোর জন্য তাদের বাবা-মায়ের কাছে দাবি তোলেন।'' বলছেন সিটি কমিশনার এস পার্থসারথি।

তিনি বলছেন, ক্লিন ইন্ডিয়া ক্যাম্পেইনে স্থানীয় মুখ হিসাবে তারা হানিফার ছবি অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছেন।

২০১৯ সালের মধ্যে ভারতের প্রতিটি বাড়িতে শৌচাগার স্থাপনের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার, তবে অনেক স্থানে সেই পরিকল্পনা বাধার মুখে পড়েছে।

সাম্প্রতিক একটি জরিপে জানা যাচ্ছে, প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী ৮৯ শতাংশ ভারতীয় খোলা স্থানে মল মূত্র ত্যাগ করতে পছন্দ করে, কারণ তারা চায় না তাদের বাড়ির কাছাকাছি স্থানে শৌচাগার থাকুক।

হানিফা বলছে, তার চিঠির ফলাফল দেখে সে খুবই খুশী।

গত দশদিন ধরে সে তার বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছিল। তবে পুলিশ তাদের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে পেরেছে।

হানিফা এবং তার বাবা অবশেষে পরস্পর হাত মিলিয়ে সন্ধি করেছে।

 

সৌজন্যে: বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029890537261963