পাঁচ যাত্রী নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া টাইটান সাবমেরিনের এক যাত্রী ছিলেন ১৯ বছর বয়সী সুলেমান দাউদ। তিনি পাকিস্তানি ধনকুবের শাহজাদা দাউদের ছেলে। কিন্তু ভয়ংকর এ যাত্রায় যেতে সুলেমান আগ্রহী ছিলেন না বলে জানিয়েছেন তাঁর ফুফু আজমি দাউদ।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সুলেমান এই ভ্রমণ সম্পর্কে আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি তাঁর আতঙ্কের কথা এক আত্মীয়কে বলেছিলেনও। শুধু বাবাকে খুশি করতেই শেষে রাজি হয়েছিলেন।
শাহজাদা দাউদের বড় বোন আজমি দাউদ। তিনি আরও বলেন, গত রোববার তাঁরা জাহাজে উঠেছিলেন। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিল বাবা দিবস। বাবাকে খুশি করতেই সুলেমান টাইটানে চড়েছিল।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আজমি দাউদ বলেন, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না তারা বেঁচে নেই। এটা অবাস্তব। মনে হচ্ছে আমি এক ভয়ঙ্কর ছবির ফ্রেমে আটকা পড়ে গেছি। তাদের কথা মনে পড়লে আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সমুদ্রে ডুব দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সাবমেরিন টাইনের ভেতরে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়েছে। সেখানে পাঁচ যাত্রীর কারোরই আর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। মরদেহ খুঁজে পাওয়ার আশাও নেই। কারণ ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে সাবমেরিনটি ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড বলেছে, সাবমেরিন টাইটানের ধ্বংসাবশেষ টাইটানিকের পাশেই সনাক্ত করা হয়েছে।
গত ১৮ জুন সমুদ্রের অতল গভীরে পড়ে থাকা টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আটলান্টিকের নিচে যায় টাইটান। এর কিছুক্ষণ পরই সাবমেরিনের সঙ্গে সমুদ্রের ওপরে থাকা জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপরই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান।
যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড, কানাডিয়ান সেনা বিমান, ফ্রান্সে উদ্ধারকারী জাহাজের সঙ্গে এ অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে রোবটও। নিখোঁজ সাবমেরিনটিতে ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেন ছিল।
প্রসঙ্গত, ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে পর্যটকবাহী জাহাজ টাইটানিক ডুবে যায়, যার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে উত্তর আটলান্টিকের তলদেশে। যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৩ হাজার ১২৩ ফুট গভীরে পড়ে আছে। সেটি দেখতে মার্কিন কোম্পানি ওশানগেটের সাবমেরিন টাইটানে চেপে রোববার কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড প্রদেশের সেন্টজন শহর থেকে রওনা হন ওই পাঁচ পর্যটক। এই অভিযানে যাওয়ার জন্য প্রত্যেক অভিযাত্রীর মাথাপিছু খরচ হয়েছে আড়াই লাখ ডলার।
সাবমেরিনে থাকা যাত্রীরা হলেন-ব্রিটিশ ব্যবসায়ী হামিশ হার্ডিং (৫৮), ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ (৪৮) ও তার ছেলে সুলেমান দাউদ (১৯), ওশনগেটের শীর্ষ নির্বাহী স্টকটন রাশ (৬১) ও সাবমেরিনটির চালক ও ফরাসি নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা পল হেনরি নারগিওলেট (৭৭)।