দৈনিক শিক্ষাডটকম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার করিমশাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিভাবকরা এক রকম নিরুপায় হয়ে স্কুলে টাকা দিয়েই ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করাচ্ছেন। এমন অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা রাজিয়ার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে সরকার। সেখানে নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষিকা অভিভাবকদের কাছ থেকে ২০০-২৫০ টাকা করে নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছেন।
এ বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা রাজিয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিভাবক নীপা আক্তার বলেন, আমার বাচ্চাদের প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করানোর সময় প্যারা শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার ও সহকারী শিক্ষিকা খাইরুননাহার লিপা জনপ্রতি ২০০ টাকা নিয়েছেন। সরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য কোনো টাকা লাগে না। আমি এ কথা বলে প্রতিবাদ করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। টাকা না দিলে অন্য স্কুলে বাচ্চাদেরকে ভর্তি করাতে পরামর্শও দেন তারা।
অভিভাবক ময়না বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উনার ছেলে আবু হুরায়রাকে গত বছর ২য় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য স্কুলে ২৩০ টাকা দিতে হয়েছিল। এ বছর আরেক ছেলেকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করাতে ওই শিক্ষিকারা ২৫০ টাকা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা লাকি আক্তার ও নূরজাহান বেগম জানান, আমাদের স্কুলে গত দুই বছর যাবত ভর্তির সময় ২৩০-২৫০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি সত্য এবং দুঃখজনক। এ অনিয়ম নিয়ে আমরা অনেকবার প্রতিবাদ করেছি কিন্তু প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানা তার খেয়াল খুশিমতো ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তি ও টিসি দেওয়ার জন্য প্রতি বছর টাকা নিয়ে যাচ্ছেন।
বিদ্যালয়ের প্যারা শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার ও সহকারী শিক্ষিকা খাইরুননাহার লিপা বলেন, প্রধান শিক্ষকা সুলতানা রাজিয়ার নির্দেশেই ভর্তিচ্ছুক ছেলে মেয়েদের অভিভাককের কাছ থেকে ২০০-২৫০ টাকা করে ভর্তি ফি নিয়েছি। টাকার বিপরীতে কোনো রশিদ দেন কিনা সে প্রশ্নের উত্তরে প্যারা শিক্ষিকা মাহমুদা আক্তার জানান, ভর্তির টাকা খাতায় লিখে রাখা হয়। কোনো রশিদ দেওয়া হয় না।
টাকা নিয়ে ভর্তির অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমি বাচ্চাদের ভর্তিতে কোনো টাকা নিই না। শুধু ভর্তি ফরমের জন্য ৫০ টাকা করে নিয়ে থাকি।
টিসি দেওয়ার ক্ষেত্রে টাকা নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ওটা অভিভাবকরা খুশিতে যা দেয় তাই রাখি। এটা দোষের না। সরকারি স্কুলে ভর্তি করতে সরকারি প্রজ্ঞাপনে টাকা নেয়ার কোনো নিয়ম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা নেয়ার কোনো নিয়ম নেই। তবে এই টাকা স্কুলের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শাকিল রেজা বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি ভর্তির জন্য ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকে তাহলে এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
নবীনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মতিয়ার রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিল হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নবীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল জানান, আমরা অভিযোগটি পেয়েছি। তদন্তের জন্য একটি কমিটি করেছি। অতি দ্রুত তদন্তের রিপোর্ট দেখে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।