শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পরও টিউশন ফি পরিশোধের কার্যত: কোনো ছাড় পেলেন না অভিভাবকরা। সারাবছরের টিউশন ফি পরিশোধ করতেই হবে। এ নিয়ে সরকারি নির্দেশনায় খুশি নন তারা। করোনাকালে বেশিরভাগ অভিভাবকের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় তারা অন্তত তিন মাসের টিউশন ফি মওকুফ চেয়েছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন, অভিভাবকদের আয়ের একটি নির্ধারিত সীমা বেঁধে দিয়ে তার নিচের আয়ের সবার সন্তানদের ছয় মাসের টিউশন ফি মওকুফ করা হবে। এ নিয়ে বিবৃতি, মানবন্ধন, টকশো হয়েছে শত শত, কোনো লাভ হয়নি। বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা এ সংক্রান্ত নির্দেশনায় টিউশন ফি মওকুফের কোনো ব্যাপারই নেই। এতে হতাশ অভিভাবকরা।
এদিকে টিউশন ফি নিয়ে শিক্ষকদের সমালোচনায় মাঠে নেমেছে জামায়পন্থী কতিপয় নামধারী অভিভাবক। কোচিং সেন্টারের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নেয় অভিভাবক ফোরাম। আবার তারাই হাইকোর্টে রিট করে, পত্রিকা/টিভিতে বিবৃতি পাঠায়। চাাঁদাবাজির অভিযোগে নিষিদ্ধ হওয়া আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবক ফোরাম বিবৃতি পাঠায় কতিপয় চিহ্নিত প্রচার ও গণমাধ্যমে। সেগুলো জামাতপন্থী ফেসবুক গ্রুপ, ইউটিউব, অনলাইন ও প্রিন্ট পত্রিকায় প্রকাশ হয়। গড়পড়তা সব শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণায় লিপ্ত এসব ভূইফোঁড় অভিভাবক ফোরাম।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে সারাদেশে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিউশন ফি আদায় নিয়ে চলছে অরাজকতা। বচসা চলছে অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের মধ্যে। এ বছর বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ার কারণে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করছে। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এই অ্যাসাইনমেন্টকে ইস্যু করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করেছে। করোনার দুর্যোগের মধ্যেও অনেক প্রতিষ্ঠান ডিসেম্বর পর্যন্ত আগাম টিউশন ফি আদায় করেছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সারাদেশের নিম্নআয়ের অসংখ্য মানুষ। নতুন করে অন্তত ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। এ সংকটকালে বেতন-ফি আদায়ে অভিভাবকদের চাপ দিয়ে চলেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি জমা দিতে প্রতিনিয়ত অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের দিয়ে ফোন করিয়ে তা পরিশোধের জন্য চাপও দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বকেয়া রাখলে পরবর্তী সময়ে জরিমানা গুনতে হবে বলেও জানানো হচ্ছে।
বুধবার মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফির বাইরে অন্য কোনো অর্থ আদায় করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাতে কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়। অধিদপ্তরের এমন সিদ্ধান্তে শিক্ষকরা খুশি থাকলেও টিউশন ফি মওকুফের সুনির্দিষ্ট খাত উল্লেখ না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তাদের দাবি, সরকারের উচিত ছিল কোন কোন খাত থেকে টিউশন ফি ছাড় দেওয়া হবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া।
মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, টিউশন ফি ছাড়া অন্য কোনো খাতে টাকা নিতে পারবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। যেমন- পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ফির মতো আনুষঙ্গিক ফি আদায় করতে পারবে না। অপরদিকে কোনো অভিভাবক চরম আর্থিক সংকটে থাকলে তার সন্তানের টিউশন ফির ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বিশেষ বিবেচনা করতে হবে। কোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। এতে আরও বলা হয়, ২০২১ সালের শুরুতে যদি কভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন কোনো ফি যেমন টিফিন, পুনঃভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন ফি নেবে না, যা ওই নির্দিষ্ট খাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করতে পারবে না। তবে নির্দেশনাও এও বলা হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় আগের মতো সব ধরনের যৌক্তিক ফি নেওয়া যাবে।
হাবিবুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আগেই সব ধরনের ফি নেওয়া হয়ে গেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরেও নেওয়া যাবে। তাহলে আর এ নির্দেশনা জারির কী দরকার ছিল? অভিভাবকরা পেল কী এতে?