ট্রাস্টির ব্যক্তিগত কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যবহারের অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ট্রাস্টিরা হবেন এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থের জোগানদাতা। এর বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে তারা আর্থিক বা অন্য কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারবেন না। তবে নিয়মের বাইরে গিয়ে কয়েক বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকার আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির টাকা থেকে বিভিন্ন ভাতা ও উপহারের নামে এসব অর্থ তুলে নেয়া হয়েছে। রোববার (১৪ নভেম্বর) বণিক বার্তা পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাইফ সুজন।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের (বিওটি) চেয়ারম্যানের এসব অনিয়মের কথা জানিয়েছেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদ উল্লাহ তালুকদার। সম্প্রতি এসব অনিয়ম বিষয়ে চিঠি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এ উপাচার্য। 

চিঠিতে বলা হয়েছে, শামীম আহমেদ যুক্তরাজ্য থেকে আসা-যাওয়ার বিমান ভাড়া, দেশে অবস্থান না করা সত্ত্বেও গাড়ি ভাড়া, চালকের বেতন ও ঈদ উপহার বাবদ বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ওপর দায়ের হওয়া মামলা পরিচালনার খরচ বাবদ প্রায় ৪৩ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। সে হিসেবে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তহবিল থেকে শামীম আহমেদ এখন পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই দরিদ্র তহবিলের নামে ৫ কোটি টাকার বেশি অর্থ মওকুফ করেছেন। যার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

শুধু আর্থিক অনিয়মই নয়, তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের জন্য কার্যালয় গড়ে তোলার অভিযোগও আনা হয়েছে। এ বিষয়ে ইউজিসিকে লেখা চিঠিতে বলা হয়, চেয়ারম্যান শামীম আহমেদসহ বিওটির অধিকাংশ সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী ও সে দেশের নাগরিক। তারাসহ দেশে থাকা অন্য সদস্যরা কেউই বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজখবর রাখেন না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিওটি ও অর্থ কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয় না। শামীম আহমেদ তার পরিবারের মালিকানাধীন সিলেটের তালতলার গুলশান হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলের ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে বিওটির অফিস চালু করেছেন।

অধ্যাপক ড. মো. শহীদ উল্লাহ তালুকদার বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশে আমি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করি। যোগ দেয়ার পর বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে পাই যেগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কিছু অনিয়মের বিষয়ে ইউজিসিকে জানানোর প্রয়োজন অনুভব করি। সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় আমি এসব অভিযোগ জমা দিয়েছি।

উপাচার্যের করা এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইউজিসি। এ বিষয়ে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের অনিয়মের কথা আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ও অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এরই মধ্যে কিছু অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হবে।

অনিয়মের এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেও শামীম আহমেদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

২০০১ সালে সিলেট অঞ্চলে প্রথম নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাত্রা করে বেসরকারি সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। শুরুর দিকে দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও উন্নত অবকাঠামোর কারণে এ অঞ্চলের উচ্চশিক্ষায় ভালো অবস্থান তৈরি করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে এ অবস্থান বেশিদিন ধরে রাখা যায়নি। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যেই মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এ দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। গত কয়েক বছরে তা চরম আকার ধারণ করেছে।

এসব দ্বন্দ্ব ও অব্যবস্থাপনার খবর প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমে যায়। পাশাপাশি মহামারীর কারণেও কমেছে আয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে সংশ্লিষ্টরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে রাখা এফডিআর ভাঙতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। ফলে আর্থিক সংকটে পড়ে গত এক বছর বেতন দেয়া যায়নি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক  বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির টাকায়। আর শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও প্রয়োজনীয় সেবা দেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ ট্রাস্টি বোর্ডের অনিয়ম আর মালিকানার দ্বন্দ্বের কারণে তাদেরই ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে। দ্রুত যেন এ সমস্যার সমাধান হয় সেজন্য ইউজিসিকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও অনুরোধ জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025730133056641