ডাবের সর্বোচ্চ মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ডেঙ্গু ও মৌসুমি জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় ডাবের চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। আর এ সুযোগে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ডাবের দাম শুনে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হওয়ার উপক্রম। রাজধানীতে খুচরা পর্যায়ে আকারভেদে একটি ডাব বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়। পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে তারা যৌক্তিক দামেই ডাব বিক্রি করছেন। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম রাখছেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আড়তে বেশি দাম হওয়ায় তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি দায় চাপানো বন্ধে ডাব কেনাবেচায় পাকা রসিদে দাম উল্লেখ করার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। একই সঙ্গে প্রতি পিস ডাবের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা  হয়েছে। নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বাজার পর্যবেক্ষণে থাকবে সংস্থাটি। গতকাল সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে অধিদপ্তরের সভাকক্ষে ডাব ক্রয়-বিক্রয় বিষয়ে সচেতনতামূলক সভায় এসব নির্দেশনা দেন সংস্থার মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

ডাবের বাজারে অসংগতি তুলে ধরে মহাপরিচালক বলেন, ডেঙ্গুর কারণে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি পায়নি, তাহলে যে ডাব ৪০ থেকে ৭০ টাকায় কারওয়ান বাজারে ঢুকছে, তা কেন ২০০ টাকার ওপর বিক্রি হচ্ছে? বাংলাদেশেই প্রথম আবিষ্কার হয়েছে ‘ডেঙ্গু ডাব’। কারণ ডেঙ্গুকে টার্গেট করে দাম বাড়ানো হয়েছে এটি স্পষ্ট।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, আকারভেদে ডাবের দাম নির্ধারণ করে তা মূল্যতালিকায় প্রদর্শন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে ক্রয়-বিক্রয় ভাউচার আকারে করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। বেচাকেনার হিসাব নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্যাডে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে ব্যবসায়ীদের। ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী এটি বাধ্যতামূলক। অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্সের পাশাপাশি ক্রয়-বিক্রয়ের পাকা ভাউচার দেখাতে হবে। সফিকুজ্জামান বলেন, আজ থেকে সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে তদারকি করবে অধিদপ্তর। স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে। ভোক্তার ডিজি বলেন, গত ২৪ আগস্ট গভীর রাতে কারওয়ান বাজার আড়তে অভিযান চালিয়ে পাইকারি পর্যায়ে ডাবের সর্বোচ্চ মূল্য আকারভেদে ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। অর্থাৎ সবচেয়ে ভালোমানের ডাব খুচরায় সর্বোচ্চ ১০০ টাকার বেশি হতে পারে না। অথচ বিক্রি হয় দ্বিগুণ দামে। কারণ এ ক্ষেত্রে কোনো রকম পাকা ভাউচার কিংবা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ রাখা হয় না। এ সুযোগে ডাবের আড়ত, পাইকারি কিংবা খুচরা প্রতিটি স্তরে মূল্যবৃদ্ধির মহোৎসব চলছে। আমরা এরই মধ্যে সারা দেশে কাজ শুরু করেছি। এর প্রভাবে ডাবের মূল্য কমতে শুরু করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১০০ টাকার মধ্যে না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত জোর মনিটরিং জোরদার রাখা হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় আড়াই লাখ ডাব ঢাকায় আসে। আড়ত পর্যন্ত আসতে ক্রয় মূল্য ও পরিবহন খরচসহ প্রতি ডাবে খরচ পড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। যা পরে আকারভেদে প্রতি পিস ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। আলোচনায় ডাবের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ডাবের দামের মূল সমস্যা খুচরা পর্যায়। আমরা তাদের কাছে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করি। তারা সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা বিক্রয় করতে পারেন। কিন্তু তারা বিক্রি করেন ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়।

অন্যদিকে, খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, আড়ত থেকে ডাব ১১০ টাকায় কিনে ১৪০ টাকায় বিক্রি করি। পাইকারি পর্যায়েই মূলত ডাবের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তারা কমালে আমরাও কম দামে বিক্রি করব। ক্যাবের সেক্রেটারি ডাব ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ বলেন, আইন মেনে হালাল উপায়ে ব্যবসা করুন। নৈতিকতার মধ্যে ফিরে আসেন এবং ডাবের মূল্য ভোক্তার ক্রয় সীমার মধ্যে রাখুন। ভোক্তা না থাকলে কার কাছে বিক্রি করবেন।

এফবিসিসিআইর পরিচালক বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা লজ্জিত। ডাব নিয়ে, কাঁচামরিচ নিয়েও আমাদের বসতে হচ্ছে। এর জন্য দায়ী হচ্ছে অতিমুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা। সবাই একে অন্যকে দুষছেন। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিদপ্তর যে ব্যবস্থা নিবে আমরা সবসময় তার পাশে থাকব।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, এফবিসিসিআইর পরিচালক হারুন অর রসিদ, ক্যাবের সেক্রেটারি জেনারেল মো. হুমায়ুন কবিরসহ ডাব বিক্রয়কারী বিভিন্ন আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056319236755371