ডা. কবির চৌধুরীর ‘ভুল চিকিৎসায়’ স্থপতি রাজীবের মৃত্যুর অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম ইউ কবীর চৌধুরীর ভুল চিকিৎসায় বুয়েট ২০০৩ ব্যাচের সদস্য ও রুফলাইনার্স স্টুডিও অব আর্কিটেকচার-এর অন্যতম প্রধান স্থপতি রাজীব আহমেদ-এর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার পরিবার ও স্থপতিদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থপতি মনন বিন ইউনুস (বন্ধু ও পার্টনার), তানিয়া শবনম, রাজীবের কাজিন ড. আরিফউদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট স্থপতি খান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক জগলুল, সাধারণ সম্পাদক স্থপতি নবী নেজাজ খান, সভাপতি বুয়েট অ্যালামনাই স্থপতি নুরুর রহমান খান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজীব আহমেদ গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার এই আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবার হতবিহ্বল হয়ে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে তার প্রেসক্রিপশন ও হাসপাতালের রেকর্ড নিয়ে কয়েক দফা আলোচনায় বসেন।  

হাসপাতালের আইসিইউ থেকে দেয়া প্রাত্যহিক রিপোর্টগুলোতে দেখা যায়, রাজীবের ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় Fulminant hepatic failure (Drug Induced), Hepatic encephalopathy leading to septicaemia, septic shock, acute kidney injury, DIC, ARDS-তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে জানা যায়, ডা. এম ইউ কবির চৌধুরীর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একই সময়ে সেবন করা ২টা মেডিসিন Methotrexate ও Acitretin-এর মিথস্ক্রিয়া (Drug interaction) তার এই Fulminant liver failure-এর মূল কারণ, যা সকল স্বীকৃত ওষুধ সংস্থার গাইডলাইনে সুস্পষ্টভাবে contraindicated বলা আছে। 

উল্লেখ্য, গত দেড় বছর রাজীব চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কবীর চৌধুরীর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। নতুন ওষুধ সেবন শুরুর করার ৯ দিনের মাথায় প্রচণ্ড পেট ব্যথা নিয়ে তিনি (রাজীব) ডা. কবীর চৌধুরীর নির্দেশে শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন। 

শমরিতায় রাজীবের অবস্থা উত্তরোত্তর খুব খারাপের দিকে যাওয়ায় এবং গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পাওয়ায় এক দিন পর তাকে স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। শমরিতা ও স্কয়ারে তাকে ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দেয়া হয় যার বহুবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ৪টি অ্যান্টিবায়োটিক এর কিডনি সংশ্লিষ্ট বিষক্রিয়াও রাজীব আহমেদের অকাল মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে। 

উভয় হাসপাতালেই চিকিৎসা চলাকালীন অব্যবস্থাপনা ছিলো এবং কালক্ষেপণ করা হয়েছে। বিশেষত শমরিতায় লিভার এনজাইমগুলোর মাত্রা অনেক বেশি থাকার পরও তারা লিভার ফেইল্যুরের ডায়াগনোসিসকে আড়াল করে অন্য ডায়াগনসিস উল্লেখ করে। 

উল্লেখ্য, ডা. কবীর চৌধুরী শমরিতা হাসপাতালের একজন ডিরেক্টর। গত শুক্রবার স্কয়ার হাসপাতালে রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরেও কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিদর্শনে আসেননি, বা কোনো সুনির্দিষ্ট ডায়াগনসিস না করে কালক্ষেপণ করা হয়। ডাক্তারদের  জিজ্ঞাসা করা হলে বার বার যখন একই কথা বলা হয় যে ‘ব্যথা ও লিভার এনজাইমের মান বাড়তে বাড়তে একসময় কমা শুরু করবে এবং ধৈর্য ধরে বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে যাবে’। অথচ রাজীব তখন লিভার ফেইল্যুর থেকে একে একে অন্যান্য অর্গান ফেইল্যুরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন; চোখের সামনে ৮ দিন ভয়ংকর যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে রাজীব তিলেতিলে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যান। 

সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয়, এই সম্ভাব্য পরিণতির কোনো আভাসই চিকিৎসকরা রাজীবকে আইসিইউতে নেয়ার আগে কেবিনে থাকা অবস্থায় তার পরিবারকে দেননি। আইসিইউতে নেয়ার পর তাকে এয়ার অ্যামবুলেন্স-এর মেডিক্যাল বিশেষজ্ঞরা ‘not fit to fly’ ঘোষণা করে! এই কালক্ষেপণ, সঠিক ও সময়োচিত ব্রিফিং এর অভাব রাজীবকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ এ নিয়ে যায়! সময়মতো চিকিৎসকেরা আমাদের রাজীবের অসুস্থতার তীব্রতা সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত করলে আমরা তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেয়ে চিকিৎসা করাতে পারতাম। কারণ আমাদের দেশে লিভার ডায়ালাইসিসের কোনো সুবিধা নেই। 

রাজীবের স্ত্রী স্থপতি সারাওয়াত ইকবাল, মা, তিন বোন ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং আর কেউ যেনো এমন ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার স্বীকার না হয় এই দাবিতে বিএমঅ্যান্ডডিসি-তে অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট আইএবি এই অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ - dainik shiksha ১৮তম প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮১ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ৫ হাজার ৪৫৬ সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002938985824585