ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির তালিকায় ‘নয়-ছয়’, ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ তালিকায় নানা অসংগতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ। ৬৩জন ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি বলে অভিযোগ তুলেছেন। দীর্ঘদিন বিনা বেতনে চাকরি করা এসব শিক্ষক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘মনে হচ্ছে আগামী একযুগেও এমপিওভুক্ত হতে পারবো না’।

গতকাল বুধবার সকাল থেকেই সারাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে তালিকায় বাদ পড়া শিক্ষকরা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান ও তালিকা নিয়ে নানা অসংগতির অভিযোগ তোলেন। তালিকায় একই শিক্ষককে একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত করা, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং সরকারিকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এক পর্যায়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন তারা। পরে দাবি পক্ষে আবেদন জমা দিয়ে হতাশ শিক্ষকরা ফিরে গেছেন।

তালিকা থেকে বাদ যাওয়া শিক্ষকরা যা বললেন :

দুপুরে অধিদপ্তরে জড়ো হওয়া শিক্ষকরা জানান, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ পাওয়া ৭৭০জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু তালিকা প্রকাশ করা হলে আমরা দেখতে পেরেছি অনেক কলেজের শিক্ষকরা এ তালিকায় নেই। অথচ আমরা সব নিয়ম মেনে শিক্ষা অধিদপ্তরে তথ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কেন হয়নি সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করতে পারছেন না কর্মকর্তারা। 

তারা আরও বলেন, আমরা দীর্ঘদিন বিনা বেতনে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। কিন্তু আমরা তথ্য দিয়েছি। তথ্য পাঠানোর প্রমাণক দেখিয়ে শিক্ষকরা বলেন, আমরা এমপিওভুক্ত হতে পারবো কিনা সে নিয়ে সন্ধিহান। আমদের মনে হচ্ছে শিক্ষা অধিদপ্তরের ভুলে আমরা এক যুগেও এমপিওভুক্ত হতে পারবো না। 

তালিকায় নয়-ছয়ের অভিযোগ : 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আসা ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্তর তালিকায় নয়-ছয়ের অভিযোগ তুলেছেন। তারা বলছেন, তালিকায় একাধিক শিক্ষক একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকরা অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী শিক্ষকরা একাধিকবার অন্তর্ভুক্ত হওয়া শিক্ষকদের একটি নাম বাতিল করে বাদপড়া শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। 

দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে থাকা তালিকায় দেখা গেছে,৬,৭,৮ ও ৯ ক্রমিকে সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চালিতাডাঙ্গা মহিলা কলেজের চার জন শিক্ষকের নাম আছে। একই তালিকার ৫৫২, ৫৫৩, ৫৫৪ ও ৫৫৫ নম্বর ক্রমিকে একই কলেজের  ওই চার শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ চারজন শিক্ষক তালিকায় দুইবার করে আছেন। 

এ তালিকায় ৬৫ থেকে ৭১ ক্রমিকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ফুলবাড়ীয়া কলেজের সাতজন শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত আছে। একই শিক্ষকদের নাম তালিকায় ৭২ থেকে ৭৮ ক্রমিকেও অন্তর্ভুক্ত আছে। এ সাতজন শিক্ষকও তালিকায় দুইবার অবস্থান করছেন। 

একইতালিকায় ২১৭ থেকে ২২৩ পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর কলেজের সাত জন শিক্ষক আছেন। এরপরই তালিকার ২২৪ থেকে ২৩০ পর্যন্ত ক্রমিকে একই কলেজের একই শিক্ষকরা দ্বিতীয় অবস্থান পেয়েছেন। 

তালিকায় ৭৪৪ থেকে ৭৪৭ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা ডিগ্রি কলেজের চার জন শিক্ষকদের নাম থাকলেও তা আবার ৭৫০ থেকে ৭৫৩ পর্যন্ত ক্রমিকে তা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সে হিসেবে এ চারজন শিক্ষকও তালিকায় দুইবার অবস্থান করছেন। 

শিক্ষা অধিদপ্তরে আসা তৃতীয় শিক্ষকরা দাবি করেন, তালিকায় ৭৩৪,৭৩৫,৭৩৬,৭৩৭ ক্রমিকে ও ৭৬৪,৭৬৫,৭৬৬ ও ৭৬৮ ক্রমিকে থাকা শিক্ষকরা অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক। তবুও তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।  এ তালিকায় সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষকরা ও ননএমপিও কলেজের শিক্ষকরা আছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকরা। তালিকায় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।

শিক্ষকদের অনেকে বলছেন, ‘কোন কোন কর্মকর্তারা ঘুষ খেয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন। একবার প্রতিষ্ঠান থেকে তালিকা পাঠানো হয়েছে আর একবার কর্মকর্তারা ঘুষ খেয়ে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’ 

ছবি : দৈনিক শিক্ষা

তালিকায় নাম না থাকায় ক্ষোভ-হতাশা, প্রক্রিয়া বন্ধের হুমকি : 

ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম না থাকায় শিক্ষকরা হতাশ। শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্তাদের সাথে আলোচনা শেষে তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে এ হতাশার কথা জানিয়েছেন। শিক্ষকরা বলছেন, আমরা তথ্য দিলেও আমাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এখন তালিকায় আমরা নেই। তালিকা ধরে এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেভাবেই অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা ছাড় করেছে। এখন তালিকা সংশোধন হলে আমরা কি এমপিওভুক্ত হতে পারবো কি না তা বুঝতে পারছি না। শিক্ষকরা আরও বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তর আমাদের আবেদন দিতে বলেছে। আমারা ৬৩জন আবেদন দিচ্ছি। কর্মকর্তারা আমাদের আশ্বাস দিলেও আমরা বুঝতে পারছি না কি হবে। 

ক্ষোভ প্রকাশ করে কেউ কেউ বলেন, ‘আমরা যদি তালিকায় না আসি আমরা আদালতের দ্বারস্থ হবো। কিন্তু তাতে ৬ শতাধিক শিক্ষকের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া আটকে যেতে পারে। আমরা তা বুঝতে পারছি। তাই আমরা এখনই সেরকম সিদ্ধান্তে না গিয়ে অধিদপ্তরকে সময় দিচ্ছি তালিকা সংশোধন করে নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের এমপিভুক্তির ব্যবস্থা করার। কিন্তু দীর্ঘদিন চাকরির পর এমপিওভুক্ত হতে না পারলে আমরা আইনি লড়াইয়ে গিয়ে এ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেবো।’

ছবি : দৈনিক শিক্ষা

শিক্ষা প্রশাসন যা বলছে : 

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা শিক্ষকদের জটিলতা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ-২ শাখার উপ-পরিচালক এনামুল হক হওলাদার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা শিক্ষকদের আবেদন দিতে বলেছি। তারা আবেদন জমা দিলে আমরা মন্ত্রণালয়কে জানাবো। মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

তালিকায় একধিক শিক্ষক একাধিকবার অবস্থান পেয়েছেন বলে শিক্ষকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কলেজ থেকে তালিকা নিয়েছি। তালিকা নেওয়ার সময় বলা ছিল কোন শিক্ষকের তথ্য ভুল থাকলে তার জন্য অধ্যক্ষ দায়ী থাকবেন। আমাদের ধারণা অধ্যক্ষরা ভুল তথ্য পাঠিয়েছেন। তাদের তথ্য হয়তো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে দুইবার। শিক্ষকদের আবেদনগুলো নিয়ে আমরা কর্মকর্তাদের সাথে বসে এ বিষয়ে কথা বলবো। 

তালিকায় দুইবার নাম থাকা শিক্ষকদের স্থানে অন্য শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের। এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

অধিদপ্তরের কলেজ শাখার কাদের নামের  একজনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033268928527832