আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, তা দূর করে এটিকে আরও ভালো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেখানেই আমরা থাকতে চাই। এ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেছেন। এটিকে যদি ভালো করা যায় তবে সেটাই করা হবে। এ আইন নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তা দূর করার চেষ্টা করছি।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনা হচ্ছে। আমি একটি জিনিস বলতে পারি, আমরা চেষ্টা করছি সব পক্ষকে শোনার। সবকিছু যাচাই-বাছাইয়ের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।
তিনি বলেন, আজকে দুটি আইন নিয়ে আলোচনার কথা ছিল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও উপাত্ত সুরক্ষা আইন। উপাত্ত সুরক্ষা আইনের একটি নতুন খসড়া ওয়েব সাইটে আজ আপলোড করা হয়েছে। আমরা পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এ বিষয়ে আগামী ৬ এপ্রিল আবার বসবো। সেখানে সেটা নিয়ে আলোচনা করবো।
মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনটিতে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা অনেকটা দূর করা হয়েছে। তারপরেও যেসব জায়গায় পরিবর্তন দরকার সেগুলো ঠিক করা হবে।
সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আজ দুটি আইন নিয়ে কথা হয়েছে। একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সেটি এরইমধ্যে বলবৎ আছে। এ আইনটির যেসব উদ্বেগের জায়গা নিয়ে কথা বলার ছিল, সেটি আমরা করেছি। দ্বিতীয়টি হচ্ছে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া। এটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে আমরা আলোচনা করতে পারিনি।
তিনি জানান, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের নতুন একটি খসড়া হয়েছে। যেটি আজকে ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়েছে। আমাদের হাতে একটি কপি এসেছে। আমরা আইনমন্ত্রী ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর (জুনাইদ আহমেদ পলক) সঙ্গে একমত হয়েছি যে আগামী ৬ এপ্রিল এ আইন নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। খসড়াটি নিয়ে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন অংশীজনের কাছ থেকে পরামর্শ এসেছে।
“আপনারা জানেন, সরকারের উদ্যোগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান খসড়াটি হয়েছে। যেহেতু খসড়াটি আজ প্রকাশিত হয়েছে। আমরা যেহেতু আগে এটি দেখতে পারিনি। আমরা সময় চেয়েছি। আগামী মাসের ৬ তারিখে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, নতুন খসড়াটি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখতে চাই। খসড়াটি পর্যালোচনা করার সুযোগ সরকার আমাদের দিয়েছে। আমরা আশাবাদী, আমাদের মন্তব্য ও পরামর্শ তারা বিবেচনা করবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যমসহ জনগণের একটি বড় অংশের উদ্বেগ রয়েছে জানিয়ে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, মন্ত্রীও আলোচনা প্রসঙ্গে এ আইনের অপব্যবহার হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। সরকার এ বিষয়ে অবহিত আছে। সার্বিকভাবে নাগরিক সমাজের অবস্থান হলো, আমরা মনে করি, এ আইনটি বাতিল করা দরকার। এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।
“কারণ এখানে মৌলিক যে বিচ্যুতি, উদ্বেগ ও পাশাপাশি আইনটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপব্যবহারের যে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, আমরা মনে করি, আইনটি ঢেলে সাজানো হলেও তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। জনকল্যাণমুখী হবে না। সে কারণে আমরা আইনটি বাতিল করা দরকার বলে মনে করি। মন্ত্রীর সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা জানিয়েছেন যে আমাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেওয়া হবে। কী অবস্থান হবে, তা মন্ত্রীর কাছ থেকে আমার জানার বিষয়।”
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, ড. সি আর আবরার, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রেজাউর রহমান লেনিন, সাইমুম রেজা তালুকদার, শারমিন খান প্রমুখ।