ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিচ্ছন্নতায় জোর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পরিচ্ছন্নতার ওপর বেশি জোর দিয়েছেন। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে পরিচ্ছন্ন। তবে ক্লাসরুমে অ্যারোসল স্প্রে করার কথা থাকলেও তা দেখা যায়নি। বুধবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।

ঈদের ছুটির আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণ করে পরিপত্র জারি করে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর পর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি লার্ভিসাইড ও অ্যারোসল ছড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কিন্তু স্কুল-কলেজগুলোয় পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর দেয়া হলেও ৪৮ ঘণ্টা পর লার্ভিসাইড ও অ্যারোসল ছিটানোর প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, ‘ঈদের ছুটিতেও আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান ছিল। এখনো তা অব্যাহত থাকবে। আমাদের কাছে যে রিপোর্ট আছে, তাতে ফলাফল ভালো। প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রয়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকরাও এতে খুশি।’

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চারপাশটা মোটামুটি পরিচ্ছন্ন। কোথাও তেমনভাবে পানি জমে নেই। তবে বাথরুমের স্যুয়ারেজ লাইনের ঢাকনার কিছু অংশ ভাঙা। এ ছাড়া সীমানাপ্রাচীরের পাশে কিছু পুরনো ভাঙা জিনিসপত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে ক্লাসরুমগুলো ছিল শিক্ষার্থীতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ।

জানা যায়, এই বিদ্যালয়টিতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী ৮৯৬ জন এবং শিক্ষক ২০ জন।

স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে সে বলে, ‘ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের আর ভয় নেই। স্কুল ও বাড়ি দুটিই আমরা পরিচ্ছন্ন রাখছি। প্রতি বৃহস্পতিবার আমরা শিক্ষার্থীরাও পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করি।’

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী শারমিন আক্তারের মা ডালিম আক্তার বলেন, ‘একটু ভয় লাগে। কিন্তু কী আর করা, পড়ালেখা তো চালিয়ে যেতে হবে।’

স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জিনাত মহল বেলী বলেন, ‘সিটি করপোরেশন থেকে প্রতিদিন সকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার আগেই ওষুধ ছিটিয়ে দিয়ে যায়। আর আমরাও সর্বোচ্চ পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করছি। ঈদের ছুটির সময় মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী আমাদের শিক্ষকরা পালাক্রমে ডিউটি করেছেন। অফিস খোলা রেখেছি। এরই মধ্যে আমরা অভিভাবক সমাবেশ করেছি। প্রতিদিনই ক্লাসে ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা হচ্ছে। ক্লাসরুমে অনেক সময় কয়েলও জ্বালিয়েছি। এমনকি আমাদের শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়েও সচেতন করছেন।’ জানা যায়, এই স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরিফা আক্তার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল। তবে বর্তমানে মোটামুটি সুস্থ হওয়ায় বাসায় অবস্থান করছে সে। 

মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটে গিয়েও পরিচ্ছন্নতার চিত্র চোখে পড়ে। স্কুল প্রাঙ্গণেই বেশ কিছু ডাস্টবিন পাওয়া গেল। সেখানে শিক্ষার্থীদের ময়লা-আবর্জনা ফেলতে বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থীর এই প্রতিষ্ঠানে শিশু শ্রেণি থেকে শুরু করে অনার্স পর্যন্ত পড়ার সুযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠে কথা হলো চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওমর ফারুক মৃধার সঙ্গে। তার কাছে ডেঙ্গু কী জানতে চাইলে সে বলে, ‘ডেঙ্গু একটি মশা, যা কামড় দিলে মানুষ অসুস্থ হয়ে যায়। এ জন্য আমাদের সব কিছু পরিষ্কার রাখতে হবে। কোথাও পানি জমতে দেয়া যাবে না। টিচাররা আমাদের এসব আগে থেকেই বলছে।’

এই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়াকে নিতে এসেছেন তার ভাই রবিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আগের চেয়ে স্কুল অনেক পরিষ্কার হয়েছে। তবে এই সচেতনতা ধরে রাখা দরকার। আর আমরা খোলা চোখে যা দেখছি মাঠ, বারান্দা এগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু ক্লাসরুমের ভেতরে কী অবস্থা তা জানি না। ক্লাসরুমে সাধারণত আলো-বাতাস কম থাকে। সেখানে পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত ও স্প্রে করা উচিত।’ এই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললেও ক্লাসরুমে তারা কখনো অ্যারোসল স্প্রে করা দেখেনি বলে জানায়। 

প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আফরিনা পারভীন বলেন, ‘ঈদের আগেই আমরা শিক্ষক, কর্মচারী ও বিএনসিসি সদস্যদের নিয়ে টিম গঠন করেছিলাম। ছুটিতেও পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান ছিল। সে সময় শুধু বাথরুমগুলোতে ২০ কেজি ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়েছি। কলেজ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ১৯টি টিম করেছি, যারা বাড়িতে বাড়িতে গিয়েও সচেতন করছে। এ ছাড়া ক্লাসরুমে স্প্রে করা হয়, মশার কয়েল জ্বালানো হয়। অ্যাসেম্বলি ও ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতন করা হয়।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036318302154541