রাজধানীর সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়াকে ‘ঢাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ এ রূপান্তর করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। একইসাথে প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো এ প্রতিষ্ঠানের ভেতর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স্ ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়নের সংবদা সম্মেলন করে এসব দাবি জানান প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। ‘মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার প্রাক্তন ছাত্র ফোরাম’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ সুরুজুজ্জামান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন কমিটির আহ্বায়ক অজিজুল হক মুরাদ ও অধ্যক্ষ সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী।
সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের নেতারা বলেন, উপ-মহাদেশের শিক্ষাঙ্গনের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ধারক-বাহক সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা। সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে বিপুল অর্থ বরাদ্দ করলেও সরকারি মাদরাসা ই আলিয়া ঢাকা বরাবরই রয়েছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। বর্তমানে মাদরাসার চার একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত উপমাদেশের প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠের আবাসিক হল এবং ক্যাম্পাস মিলে নাম মাত্র দুটো ভবন ছাড়া পুরো মাঠ এবং জমি দখলের পায়তারা চলছে।
প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেতারা বলেন, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য ভবন আলাদা ও স্বতন্ত্র কোন স্থানে হতে পারে। সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়ার মত স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের প্রাচীরের ভেতর প্রস্তাবিত ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা শুধু অমানবিকই নয়, অনৈতিক এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উচ্চ শিক্ষার এ বিদ্যাপিঠকে অবজ্ঞা, অবহেলা ও তিলেতিলে ধ্বংসের দিক ঠেলে দেয়ার এক গভীর চক্রান্ত ও নীল নকশার অংশ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান সরকার মাদরাসা শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছে। অথচ সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার ছাত্রাবাসসহ এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পরিবর্তে ওই প্রতিষ্ঠানের ভেতর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন করার পরিকল্পনা সরকারের দ্বিমূখি আচরণ ও মাদরসা শিক্ষাকে অবজ্ঞা করার শামিল। আমলাতান্ত্রিকতার কুটকৌশলে সরকারকে ভুল বার্তা দিয়ে মাদরাসা শিক্ষক, ছাত্র তথা সাধারণ ধর্মপ্রাণ জনতার মাঝে একটা ভুলবোঝাবুজি ও দুরত্ব সৃষ্টির অপকৌশল কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। নেতারা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। তা না হলে আন্দোলনের ঘোষণা দেন।
সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার প্রাক্তন ছাত্র ফোরামের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার নিজস্ব জমিতে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন স্থাপন করার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার নামের চার একর জমি দখলমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, ছাত্রদের আবাসন সংকট নিরসনে কমপক্ষে আরও দু’টি হল নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে, ছাত্রদের নামে দেয়া মামলা প্রত্যাহর ও ছাত্রাবাস খুলে দিতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানটির ২৫০ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকাকে ‘ঢাকা আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সদস্য মো. ইসমাইল ফারুক, আমিনুল হক, হাবিবুল্লাহ, আহমাদ আবদুল কাইয়ুম,শহিদুল ইসলাম কবির ও মোক্তার হোসেন খান।
