ঢাকা কমার্স কলেজের ছাত্র রাফিত খু*নের নেপথ্যে

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

ঢাকা কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হাসান রাফিত (১৮) ছিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেন। তার সহপাঠী রাজিন চৌধুরীর চলাফেরা ছিলো কিছুটা বেপরোয়া। সহপাঠীদের সঙ্গে প্রায়ই  অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতো। রাজিনের বাবা একজন আইনজীবী এবং তার মা স্কুল শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের ভালো অবস্থানের কারণেও কিছুটা দাপট দেখাতো। এ নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে অভিযোগও দেয়া হয়েছে। রাজিনের বিরুদ্ধে সহপাঠীদের অভিযোগের বিষয়টি ক্যাপ্টেন জুবায়ের কলেজের অধ্যক্ষকে জানিয়েছিল। পরে তার বাবা-মাকে ডেকে সতর্ক করা হয়।

এ নিয়ে রাজিনের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। আর সেই ক্ষোভ থেকে শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী থানা এলাকায় জুবায়েরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল তার মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বজনরা জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে তার মরদেহ দাফন করা হবে। 

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজিন ও তার বাবা ইকবাল চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন  নিহত রাফিতের বাবা আবুল বাশার। রোববার (৭ জুলাই) রাতে হবিগঞ্জ থেকে রাজিন ইকবালকে (১৮) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব ।

নিহত জুবায়েরের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। তার বাবা  ভূমি অফিসে চাকরি করেন আর মা আয়েশা সিদ্দিকা রুমী গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুবায়ের ছিল সবার বড়। তিনি ঢাকায় মিরপুর ১ নম্বর রাইনখোলা এ-ব্লকে মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে ঢাকা কমার্স কলেজে আসা-যাওয়া করতেন।

পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে শাহ আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী প্রাথমিক তদন্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সহপাঠীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিহত জুবায়েরের মাথায় ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি কাটা জখম রয়েছে। এ ছাড়া ডান চোখের পাশে কাটা, গলায় ৩ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা জখম, বুকের ডান পাশে কাটা জখম আছে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কব্জি প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। 

মো. নুরুজ্জামান বলেন, জুবায়ের কলেজের ক্লাসে ক্যাপ্টেন ছিল। গত এক মাস আগে ক্লাসে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সহপাঠী রাজিনের মারামারির ঘটনা হয়। এতে রাজিনের বিরোধিতা করে জুবায়ের। ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিন ক্লাসের মধ্যে জুবায়েরের ওপর চড়াও হয়। তখন জুবায়ের কলেজের অধ্যক্ষের কাছে নালিশ করেন। পরে কলেজের অধ্যক্ষ রাজিনের বাবা-মাকে তলব করেন এবং বাবা-মা’র সামনে রাজিনকে সতর্ক করে দেন। ধারণা করছি, এই ক্ষোভ থেকেই রাজিন ও তার বাবা দু’জন মিলে কৌশলে জুবায়েরকে তাদের বাসায় নিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছে। তবে তাদের গ্রেপ্তার করলে আসল বিষয় বেরিয়ে আসবে। 

তিনি বলেন, আমার ভাগ্নে মোবাইল ব্যবহার করতো না। কোনো মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিল না। গত শনিবার সকালে কোচিংয়েও গিয়েছে জুবায়ের। সন্ধ্যায় বাসায় না ফেরায় জুবায়েরকে খোঁজ করতে বের হই। সকালের কোচিংয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে সেখানে গিয়েছে। কিন্তু বিকালের কোচিংয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি জুবায়ের সেখানে যায়নি। সর্বশেষ রাতে তাদের কলেজের এক শিক্ষকের মাধ্যমে জানতে পারি জুবায়েরকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

ঢাকা কমার্স কলেজের প্রিন্সিপাল আবু মাসুদ বলেন, এই ঘটনা কলেজের বাহিরে হয়েছে। এর দায়ভার কলেজ কর্তৃপক্ষ নিবে না। তবে রাজিনের একটি বিষয় নিয়ে কিছুদিন আগে আমাদের কাছে আসলে আমরা সমাধান করে দিয়েছি। এই ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। বিষয়টি তারা তদন্ত করে দেখছেন।

শাহ আলী থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় দুইজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আমরা কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে এই ঘটনার তদন্ত করছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061562061309814