ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়: সলিমুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাদানের লক্ষ্য থেকে সরে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন লেখক–অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর গণতন্ত্রের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বারবার চেষ্টা করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারেননি সলিমুল্লাহ খান। তিনি একাধিক মানহীন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। 

রোববার সন্ধ্যায় এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে গত জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার আয়োজন করছে। গত পাঁচ মাসের প্রতি মাসে একটি করে বিষয়ের ওপর তিন দিনব্যাপী ওয়েবিনার হয়েছে। এর শেষ ধাপে ‘উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ’ বিষয়ে ওয়েবিনারের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন হয় রোববার।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

ওয়েবিনারের প্রথম পর্বে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার সঙ্গে কী ঘটেছে: পুঁজিবাদের শেষ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার সংকট’ বিষয়ে বক্তব্য দেন সলিমুল্লাহ খান। পরে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ বছরে অনেক বদলেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শিক্ষাদানমূলক এবং ঐক্য বা সমতামূলক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন এটি একটি তদারকিমূলক ও অধিভুক্তিমূলক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষাদানের লক্ষ্য থেকে সরে গেছে।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ভাষা ছাড়া আর কিছুই শিখিনি৷ আইনের ছাত্র হলেও পরে আমি অর্থনীতিসহ অন্যান্য বিষয়ও শিখেছি৷ আমার ছাত্র ও শিক্ষকজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নয়৷ তবে এটি এর ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে৷ এটি পূর্ববঙ্গে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করেছিল, যা ছিল সময়ের চাহিদা। পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর গণতন্ত্রের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা পুরোপুরি ধ্বংস করেছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কোনো ‘একাডেমিক ডিসকোর্স’ নেই বলে মন্তব্য করেন সলিমুল্লাহ খান৷ তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছি। এগুলোতে শিক্ষণের কিছুই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন পিছিয়ে পড়ছে? নিয়োগের ক্ষেত্রে কী ঘটছে? মাঝারি মানের লোকেরা এখানে সেরা মানের লোকদের নিয়োগ দেন। ব্যতিক্রম থাকতে পারে। তবে আমার মনে হয়, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অপমান। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে প্রাথমিকভাবে শিক্ষাদান এবং তার পরে গবেষণার কেন্দ্র। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাদানের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থিত হলেও বর্তমান পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ই চিন্তার জায়গায় ওয়েস্টার্ন।’

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ধর্মীয় ও সেক্যুলার—উভয় ধরনের কর্তৃত্ববাদের যুগে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে হলে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা প্রয়োজন। যাঁদের এই নিরাপত্তাটি রয়েছে, তাঁদের প্রয়োজনে রাষ্ট্র ও বিভিন্ন বিশ্বাসের ধর্মীয় সংগঠন-প্রতিষ্ঠানের আরোপিত নীতির সমালোচনা-পর্যালোচনায় এটিকে ব্যবহার করা উচিত।

খ্যাতিমান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রওনক জাহানের সঞ্চালনায় এই পর্বে কানাডাপ্রবাসী অধ্যাপক হাবিবা জামান বক্তব্য দেন। রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেন’স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক পারভীন হাসানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারের দ্বিতীয় পর্বে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এস এম শামীম রেজা, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক নিলয় রঞ্জন বিশ্বাস।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024759769439697