ঢাবিতে আবেদন প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলেও ভর্তি সনাতন

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

ডিজিটাল যুগেও  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তির কার্যক্রম সনাতন পদ্ধতিতে চলছে। আবেদন প্রক্রিয়া ডিজিটাল হলেও ভর্তি প্রক্রিয়া এখনো সনাতনী। ভর্তি প্রক্রিয়ায় এমন ভোগান্তি মানতে পারছেন না নতুন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা। অনেকেই অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এটি আশা করা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখতেই ভোগান্তি শুরু। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার চেয়েও ভর্তি সম্পন্ন করা কঠিন। ভোগান্তির কথা স্বীকার করে আগামী বছর থেকে সংকট থাকবে না বলে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

ঢাবিতে এবার কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিট, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও চারুকলা ইউনিট মিলে মোট ৫ হাজার ৯৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে সময় দেওয়া হয়েছে মাত্র তিন দিন। ফলে কষ্ট হলেও তাড়াহুড়ো করে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ভিড় জমিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। তীব্র গরমের ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিসে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ১০ থেকে ১২ জুনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগে হাজির হয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা অনলাইনে দেওয়া হলেও ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে টাকা জমার রসিদ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের অগ্রণী ব্যাংক ও কলা, আইন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদসহ অন্য অনুষদের শিক্ষার্থীদের সোনালী ব্যাংক থেকে সত্যায়িত করতে হয়। সত্যায়িত রসিদ বিভাগে জমা দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়।

অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংকের যেকোনো শাখায় কাজটি করা যায় না। দুই ব্যাংকেরই শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করপোরেট শাখায় করতে হয়। তীব্র গরমে লাইনে দাঁড়িয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা হয় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এ বছর এ সময়ে ঈদুল আজহার ছুটিতে ভর্তি কার্যক্রম রাখায় যাতায়াতের ভোগান্তিও রয়েছে ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ফি জমা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকের কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। প্রশাসনিক ভবনে সোনালী ব্যাংক, সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের লাইন চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট হয়ে ভিসি চত্বর পর্যন্ত। টিএসসিতে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ করা গেছে। জনতা ব্যাংকের টিএসসি শাখার গেট থেকে শুরু করে লাইন টিএসসির মূলগেট হয়ে মেট্রোরেল স্টেশন অতিক্রম করে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনে পর্যন্ত পৌঁছেছে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, দাঁড়িয়েছেন অভিভাবকরাও।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহেদ বলেন, ‘আমি চট্টগ্রাম থেকে এসেছি আজকে সকালে। ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রশাসনিক ভবন, আবার ডিপার্টমেন্ট হয়ে হল, আবার হল থেকে ব্যাংক। সোনালী ব্যাংকে টাকা দিতে গিয়ে পাঁচ ঘণ্টা লেগেছে। বিকেল সাড়ে ৩টা হয়ে গেছে এখনো ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়নি। আধুনিকতার এ যুগে এসেও হাজার হাজার স্টুডেন্টকে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হয়, দেশসেরা প্রতিষ্ঠানে এমন প্রাগৈতিহাসিক সিস্টেম! সত্যিই লজ্জাজনক। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকের টাকা জমা দিতে পারিনি।’

ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রথমেই বলে নিই বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা গত বছর থেকে চেষ্টা করেছি ডিজিটালাইজেশনের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বলেছিলাম নিজ নিজ বিভাগে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ব্যাংকের কার্যক্রমটি যাতে সম্পন্ন করে। প্রতিটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ বিভাগে তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা জমা দেবে, অতঃপর বিভাগ টাকাগুলো তাদের নিজস্ব ফান্ডে জমা নেবে। কিন্তু বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। সব বিভাগ নিজেদের তত্ত্বাবধানে টাকা নিতে চায়নি। অনেক বিভাগ চেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিনেই এমন একটা বিষয় কতটা পীড়া দিচ্ছে তা আমি খুব বুঝতে পারছি। আপাতত কিছু করার নেই। আশা করি দ্রুত এর সমাধান হবে।’

উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। আমরাও তাদের ভোগান্তির কথা বুঝতে পারছি। উপাচার্যসহ আমরা বিষয়টি নিয়ে বসেছি এবং সংকট উত্তরণের কথা ভাবছি। সংশ্লিষ্ট শাখাকে সে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আশা করি আগামী বছর থেকে এ ভোগান্তি থাকবে না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053048133850098