ঢাবিতে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট পেশ

ঢাবি প্রতিনিধি |

২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রস্তাবিত বাজেট। দুই উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ প্রশাসনের শীর্ষ কয়েকজনের বয়কটের কারণে আটকে থাকা মূলতবিকৃত বার্ষিক সিনেট অধিবেশন গতকাল অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের মূল মিলনায়তনে পুরনো বিভেদ ভুলে সবাই যোগ দিলেও কিছুটা দূরত্ব দৃশ্যমানই ছিল।

এদিন কোষাধ্যক্ষপদ শূন্য থাকায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সিনেট অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল।

এর আগে গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হয়নি। বাজেট উপস্থাপন ও বিবেচনার জন্য সিনেটের এই অধিবেশন গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। গতকাল অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ তার পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। করোনা পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য অনুষ্ঠিত হয় এই অধিবেশন।

সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলতি অর্থবছরের জন্য ৮৬৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বাজেট পাশ হয়। বাজেটে আয় হিসেবে ধরা হয়েছে ৮১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা। যা ঘোষিত বাজেটের ৯৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মধ্যে ৮৬ দশমিক ০৩ শতাংশ আসবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে। টাকার অঙ্কে ৭৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। আর ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ফি, ভর্তি ফরম বিক্রি, বেতন-ভাতা, সম্পত্তিসহ নিজস্ব খাত থেকে ৭১ কোটি টাকা আয় দেখানো হচ্ছে। ঘাটতি থাকবে ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা? এর আগে ফিন্যান্স কমিটির সভা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা সিন্ডিকেটে বাজেট অনুমোদন পায়।

প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবারও দুই-তৃতীয়াংশের বেশি ব্যয় হবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন বাবদ। অন্যদিকে ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও বরাবরের মতোই উপেক্ষিত গবেষণা খাত।

এই বাজেটে গবেষণার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১.০৯ শতাংশ। গত বছর গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ২.১ শতাংশ। যদিও সিনেট অধিবেশনে বেশ কয়েকজন সদস্যই গবেষণাখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ব্যাপারে পরামর্শ রেখেছেন।

গতকাল পাশ হওয়া বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৭০ শতাংশই বরাদ্দ হয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ। এরমধ্যে বেতন বাবদ ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি টাকা, যেটি মূল বাজেটের ৩০ দশমিক ৭১ শতাংশ। এরমধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বেতনই ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়াও ভাতাদি বাবদ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ২৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। এ খাতে দায়িত্বভার ভাতা ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যাতায়াত ভাতা ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, বাড়ি ভাড়া বাবদ ১১৮ কোটি ৭১ লাখ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ১২ কোটি টাকা, মোবাইল ফোন ভাতা ৮৫ লাখ টাকা, আবাসিক টেলিফোন নগদায়ন ৩ কোটি টাকা, টিফিন ভাতা ৭৮ লাখ টাকা, ধোলাই ভাতা ৩২ লাখ টাকা, উৎসব ভাতা ৪৫ কোটি টাকা, অতিরিক্ত কাজের ভাতা ৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, বিনোদন ভাতা ৯ কোটি টাকা, বাংলা নববর্ষ ভাতা ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বিশেষ ভাতা ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এদিকে, বাজেটের ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ ব্যয় হবে পেনশন ও অবসর সুবিধা হিসেবে। যা টাকার অঙ্কে ১২৫ কোটি টাকা।

বাজেটে সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯৮ কোটি ৪ লাখ টাকা। যা মূল বাজেটের ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। অন্যান্য অনুদান হিসেবে ব্যয় হবে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর মূলধন অনুদানের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩০ কোটি ৬১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এদিন দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও পেশ করেন। যেখানে গেল অর্থবছরে ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকা থেকে বেড়ে ৮৪৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়।

এদিকে বাজেটের মুখবন্ধে করোনা মহামারীর কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আর্থিক তথ্যাদি পুরোপুরি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে অনুমাননির্ভর তথ্যের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কোথাও কোন বরাদ্দ সমন্বয় করার প্রয়োজন হলে বা কোন তথ্যের প্রয়োজন হলে ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সমন্বয় ও সংযোজন করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024189949035645