ঢাবির ক্যান্টিনবয় নজরুল ঢাবিতেই পড়তে চায়

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ক্যান্টিনবয় হিসেবে কাজ করেন নজরুল ইসলাম। ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর মাঝে যে সময়টুকু পায় তাতে চলে পড়াশোনা। গত বুধবার প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ-৪ দশমিক ৫৮ পেয়েছেন। দুঃখী বাবা-মাকে একটু স্বস্তি দিতে তার এই কাজ নেয়া। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন বুনছে সে।

নজরুল জানান, তার বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া থানায়। বাবা-মা আর চার ভাই বোন নিয়ে তাদের সংসার। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। থাকার জায়গাটাই তাদের একমাত্র সম্বল। অন্যের বর্গা জমিতে কাজ করে সংসার চালাতেন নজরুলের বাবা। কিন্তু দুই বছর ধরে বাবা অসুস্থ। হাত-পায়ে কাজের শক্তি পান না। তাই আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়।এর মধ্যে ধার-দেনা করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে নিস্ব হয়ে পড়েন তিনি।

বাবা অসুস্থ হওয়ার পর পুরো পরিবারের বোঝা এসে পড়ে নজরুলের কাঁধে। এ কারণে এসএসসি পাস করার পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। কিন্তু নজরুল হাল ছাড়েননি। ক্যান্টিন বয়ের কাজ নেন ঢাবির মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে।

নজরুল বলেন, ‘অনেক কিছু চিন্তা করে ক্যান্টিনে কাজ নিই। ভোর ৬টায় ঘুম থেকে উঠেই ক্যান্টিনে কাজ শুরু হয় আর শেষ হয় রাত ১০টায়। কাজ শেষে যেটুকু সময় পেতাম বই নিয়ে বসে যেতাম। কষ্টে করে এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। বুধবার ফল প্রকাশ হয়েছে। আমি জিপিএ-৪.৫৮ পেয়েছি। পরিবারের সবার চোখে আনন্দের অশ্রু।’

নজরুল আরও বলেন, ‘পরিবারের অভাবে কাজ নিয়েছি ক্যান্টিন বয় হিসেবে। সেখানে দিনে ১৫০ টাকা দেয়, কাজ না করলে টাকা দেয় না। আমার থাকা খাওয়া ফ্রি। এখান থেকে যা টাকা পাই সেটা বাসায় পাঠিয়ে দিই।’

নজরুল আক্ষেপ করে বলেন, ক্যান্টিনে অনেক চাপ। সারাদিনের পরিশ্রমের কারণে পড়ায় মন বসে না। ঘুম চলে আসে। রাত ১২টায় ঘুমাতে যাই।

নজরুলের স্বপ্ন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। কিন্তু চোখে মুখে হতাশা। কারণ এভাবে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যে পড়ালেখা, তা করা সম্ভব না। হাতে আছে দুই থেকে তিন মাস সময়।

তিনি বলেন, ‘এ কয়টা মাস যদি আমি কাজ বন্ধ রেখে পড়তে পারতাম, তাহলে হয়তো আমি ভালো কিছু করতে পারতাম। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে টিউশনি করে হলেও সংসারের হাল ধরতে পারতাম। কিন্তু এ কাজ বন্ধ রাখাতো আমার পক্ষে সম্ভব না। কাজ না করলে বাবা-মা, বোন খাবে কী?’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025160312652588