ঢাবির ক্যান্টিনের খাবারে ১৪ ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু

দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি |

এক গবেষণায় দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়ার ভেতরে থাকা ক্যান্টিনের খাবারে প্রাণনাশী ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাইসহ ১৪ ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আছে। গবেষণা প্রবন্ধটি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনী জার্নাল ‘উইলি জার্নালে’ প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষক দল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ক্যান্টিন থেকে আলুর ভর্তা ও মুরগির মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে। এর মধ্যে চারটি ক্যান্টিনের খাবারে উচ্চমাত্রার ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান পায় তারা। গবেষণায় দেখা যায়, মুরগির মাংস ও আলুর ভর্তায় পাওয়া ব্যাকটেরিয়াগুলো অধিকাংশই ওষুধ প্রতিরোধী। মুরগির মাংসের চাইতেই আলুর ভর্তায় ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেশি। গবেষণায় এই ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মানুষের জীবনের জন্য 'হুমকি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্যান্টিন পরিচালক ও দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় খাবারে মুরগির মাংস সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিক্রি হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ক্যান্টিনের রান্না করা মুরগির মাংসে ক্লোস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়া আছে। এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি বুঝায়, মাংস রান্না করার সময় তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয় না।

এছাড়া গবেষণায় মুরগির মাংস ও আলুর ভর্তায় ১৪ ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ই-কোলাই। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এক গবেষণায় বলেছে, ই-কোলাই প্রায় সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে।এই ব্যাকটেরিয়া এতটাই শক্তিশালী যা মানবদেহে সংক্রমণ ঘটিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

দুই ধরনের খাবারেই 'প্রোটিয়াস' ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। কিডনিতে পাথর জমাতে এই ব্যাকটেরিয়া কাজ করে।এছাড়াও, ক্লেবসিয়েলা, সালমোনেলা, ভিব্রিও ব্যাকটেরিয়ার সন্ধানও পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো মাথাব্যথা, ডায়রেয়িা ও কলেরার মতো রোগের জন্ম দিতে পারে। প্রতিদিন ক্যান্টিনে খাবারের মাধ্যমে এমন আরো ৯ ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

গবেষণার তথ্যের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলে থাকা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। শিক্ষার্থীরা বলছেন, হলের ক্যান্টিন ও বাইরে থাকা ক্যান্টিনের খাবারের মান ও ক্যান্টিনের পরিবেশ সেই আগের মতোই আছে।

শেখ তানভীর বারী হামিম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ক্যান্টিনের খাবারের মানে এখন পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন দেখছিনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত শিক্ষার্থীদের খাবারের দাম-মানের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট কমিটি করে দেয়া। যে কমিটি সেন্ট্রালি খাবারের দাম মান মনিটর কারবে।’

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘হলের ক্যান্টিনের খাবারে কোনো পরিবর্তন দেখছি না। উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে আছে শুধু বৈধ শিক্ষার্থীদের আসন বণ্টন। প্রশাসনের উচিত গুরুত্ব বিবেচনায় খাবারের দাম মানের দিকে নজর দেওয়া।’

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসান বলেন, ‘মানসম্মত খাবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হলের ক্যান্টিন মনিটরিংয়ের জন্য শিক্ষকদের একটি কমিটি করে দিয়েছি। একই সঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষ থেকে একজন করে পাঁচ জন শিক্ষার্থী ক্যান্টিন মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবে। প্রতি মাসে এই পাঁচ জন পরিবর্তন করে নতুন পাঁচ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। এভাবেই হলের খাবারের মান নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করার পরিকল্পনা করেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারের পরিচালক ডা. মো. তানভীর আলি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই বিভিন্ন চিকিৎসা নিতে আসে। তবে খাদ্যজনিত অসুস্থতা নিয়ে ঠিক কত শতাংশ শিক্ষার্থী আসে তা বলতে পারছি না। এ ধরনের কোনো তথ্যআমরা সংরক্ষণ করি না।

এই গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শারমিন রুমি আলিম। এই গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক শারমিন বলেন, ‘সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনের ক্যাফে, সাইন্স লাইব্রেরির পাশের ক্যাফেসহ হলের বাইরে যে ক্যাফেটেরিয়াগুলো আছে, সেগুলোর খাবারের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। কিন্তু এই খাবারের বড় অংশই আমাদের শিক্ষার্থীরা খেয়ে থাকে। হলের খাবার যেহেতু রান্না করার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীরা খেয়ে থাকে তাই ঐ খাবারে বাইরের ক্যাফে থেকে তুলনামূলক ক্ষতি কম হয়। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এই খাবার খাওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের টাইফওয়েড, জ্বরসহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই গবেষণার দুই পদের খাবারে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পেয়েছি যা অত্যন্ত শক্তিশালী ব্যকটেরিয়া।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063109397888184