ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসনের ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, আমলাতান্ত্রিক চর্চা ও দীর্ঘসূত্রতা থেকে মুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসমাজ। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ, আবাসন, পরিবেশ নিয়ে সংস্কারের নানা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়।
গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে এই আলোচনা হয়।
এই প্ল্যাটফর্মের নেতৃত্বে রয়েছেন ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। সভায় বক্তব্য দেন ঢাবি উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান, কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ও উমামা ফাতেমা।
সংস্কার প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রভাষক নিয়োগ হবে অস্থায়ী। প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের পর পিএইচডি এবং নিজ ডিসিপ্লিনের একটি টপ জার্নালে একক আর্টিকেল প্রকাশ করার পর সহকারী অধ্যাপক পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ/পদোন্নতি পাবেন। এ ক্ষেত্রে দুইটি ধাপ অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে উচ্চতর ডিগ্রি/অভিজ্ঞতা (এমফিল পিএইচডি পোস্ট ডক ফেলোশিপ), প্রকাশনা, শিক্ষকতা যোগ্যতা, সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রয়োজন বিবেচনায় বিভাগের একাডেমিক কমিটি আবেদনকারীদের প্রাথমিকভাবে বাছাই করবেন।
দ্বিতীয় ধাপে বাছাই করাদের ক্যাম্পাস ভিজিটের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে এবং তাঁরা তিনটি পর্বে অবতীর্ণ হবেন। প্রথমে তিনি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও নিয়োগ কমিটির উপস্থিতিতে টিচিং ডেমোনেস্ট্রেশন দেবেন এবং শ্রোতারা একটি মূল্যায়নপত্রে রেটিং দেবেন; দ্বিতীয় পর্বে তিনি শিক্ষার্থীদের (প্রধানত মাস্টার্স) সঙ্গে সংলাপ ও প্রশ্নোত্তর পর্ব করবেন (এতে শিক্ষার্থীরা বেনামে আবেদনকারীর ব্যাপারে মতামত জানাবেন)। তৃতীয়ত, নিয়োগ কমিটির সঙ্গে সাক্ষাৎকার পর্বে অবতীর্ণ হবেন এবং নিয়োগ কমিটির সদস্যের চেকলিস্টসহ এক সেট প্রশ্নমালা থাকবে, সেই সেট থেকে প্রশ্ন করতে হবে।
প্রস্তাবগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে বিশ্লেষণী ক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা, একজন শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থীর অনুপাত অন্তত ৪০ জনে নিয়ে আসা, বাজার চাহিদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন বিভাগে ভর্তি ৪০ জনের মধ্যে রাখা, পিএইচডি অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাসিক অন্তত ৫০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া, শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন চাকরি ও ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করা।
অবকাঠামো বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো জমি পুনরুদ্ধার, শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল প্রযুক্তি, তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা; ক্যাম্পাসের সর্বত্র শক্তিশালী ওয়াইফাই ব্যবস্থা স্থাপন করা এবং অধিভুক্ত সাত কলেজকে বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান রিসোর্সকে নিজেদের উন্নয়ন ও বিকাশে নিয়োজিত করার প্রস্তাব দেওয়া হয় সভায়।