ঢাবির শিক্ষার্থীকে মারধর : দুই গ্যাং সদস্যকে থানায় পাঠালো কর্তৃপক্ষ

ঢাবি প্রতিনিধি |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্যার এ এফ রহমান হলের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ সদস্যরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই শিক্ষার্থীকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করা হয়েছে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করে শাহবাগ থানায় পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ছাত্রের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর মা সাদিয়া আফরোজ খান। ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম জোবায়ের ইবনে হুমায়ূন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ ও স্যার এ এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়াকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, মো. সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ, সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব, মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান, কবি জসীম উদদীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন, জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ের আরো ৬-৭ জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে।

এদিকে থানায় অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।

জানা গেছে, অভিযুক্তরা ‘প্রলয়’ নামে একটি গ্যাংয়ের সদস্য। ক্যাম্পাসে মারামারি, হেনস্তা, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত তারা। অভিযুক্তদের বাইরেও ওই গ্যাংয়ে রয়েছে বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছে।

ভুক্তভোগী জোবায়ের বলেন, ওই মারধরে আগে আমাকে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের সিফরাত সাহিলের ফোন দিয়ে কল দেয়া হয়েছিলো। ট্রুকলার দিয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি। 

অভিযুক্ত সাহিলও বেপরোয়া গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শহীদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় ‘নিকুম্ভিলা’ নামে গ্যাংয়ের কার্যালয় বানিয়েছেন। যেখানে তারা নিয়মিত জড়ো হন এবং সংঘবদ্ধে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত করেন। জানা গেছে এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

বেপরোয়া এ গ্যাংয়ের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তথ্যপ্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো গ্যাং থাকবে না। এসব অপকর্মকারীরা কারা, কোথা থেকে এলো, কারা সেল্টার দেয়, সব খুঁজে বের করা হবে। যথাযথ শাস্তির আওতায় আনা হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা তদন্ত করতে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কবি জসীমউদ্দিন হল প্রশাসন। জানা গেছে, হলটির আবাসিক শিক্ষক মোহাম্মদ শোয়েবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট দিতে কমিটিকে বলা হয়েছে।

জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত দুই গ্যাং সদস্যকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে তাদের শাহবাগ থানায় পাঠানো হয়েছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে কারো নাম প্রকাশ করতে চাইছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শিগগির তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমাদের এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। অভিযুক্ত সবাইকে প্রমাণের সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকার অনিয়মই যেনো নিয়ম! সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে - dainik shiksha সনদ জালিয়াতিতে শনাক্ত আরো কয়েকজন নজরদারিতে শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় রদবদল আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি - dainik shiksha আকাশে মেঘ দেখলেই স্কুল ছুটি প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসে শিক্ষক চাই না please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052180290222168