দৈনিকশিক্ষাডটকম, সিলেট : সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনের দীর্ঘদিনের সংসদ সদস্য সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। নানা জল্পনা-কল্পনার পর এবারও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পান দলটির সাবেক এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। তবে প্রচারের শেষ সময়ে এসে এই আসনে সমঝোতার গুঞ্জন উঠেছে।
আলোচনা শোনা যাচ্ছে, এই আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীকে ছাড় দিতে পারে আওয়ামী লীগ। এক্ষেত্রে সমঝোতার বলি হতে পারেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সমঝোতার গুঞ্জনের শুরুটা গত বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবার যথারীতি নিজ নির্বাচনী এলাকা গোলাপগঞ্জে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। হঠাৎ সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে তাকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। দুপুর ১২টায় বিমানের ফ্লাইট ধরে ঢাকায় যান তিনি।
সূত্র জানায়, ঢাকায় প্রায় ৪০ মিনিট তাকে নিয়ে বৈঠক করা হয়। এর আগে বুধবার ঢাকায় যান তৃণমূল বিএনপির সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী। তিনিও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে।
এরপর থেকেই গুঞ্জন শুরু হয়, সিলেট-৬ আসনে তৃণমূল বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের। যদিও ঢাকায় বৈঠকের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাননি নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরী। সমঝোতার কথাও অস্বীকার করেছেন তারা।
নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার শুরু থেকেই চাপের মুখে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এলাকায় উন্নয়নবিমুখতার অভিযোগ রয়েছে। তার আসনে এবার দল থেকেই মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরো অন্তত চার নেতা। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থানেও রয়েছেন তিনি। তবে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী এ আসনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে সমঝোতার গুঞ্জন শুরু হয়।
সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকলেও ভোটের মাঠে তার তেমন অবস্থান নেই। বরং এ আসনে নাহিদ ও সরওয়ারের মধ্যে লড়াই হতে পারে বলে আলোচনা চলছিলো।
তবে গত দুই-তিন দিনে পাল্টে গেছে চিত্র। বিশেষত নাহিদ ও শমসেরের ঢাকায় ঝটিকা সফরের পর শুরু হয়েছে নতুন করে হিসাব-নিকাশ। দলের প্রার্থী ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ থাকার পরও আওয়ামী লীগের একাংশ প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে শমসের মবিনের পক্ষে। বিশেষ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শমসেরের পক্ষে ভোটের মাঠে সরব।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলের উচ্চ পর্যায় থেকে তাদের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে কাজ করতে বলা হয়েছে। তাই তার পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন তারা।
গোলাপগঞ্জ আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, নুরুল ইসলাম নাহিদ ও শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা হয়েছে। তাদের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।
শমসের মবিনের নির্বাচনী প্রতীক সোনালি আঁশ। তার পক্ষে প্রচারে সক্রিয় নেতাদের একজন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এবার নির্বাচন উন্মুক্ত। দল বা প্রতীক মুখ্য নয়। তাই আমরা এবার যোগ্য ব্যক্তির পক্ষে। আমাদের এলাকা দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন প্রয়োজন। শমসের মবিন একজন যোগ্য প্রার্থী। তাকে ভোট দিয়ে এলাকার উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে।
তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শমসের মবিন বা হুছামুদ্দীনকে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নেতাকর্মী সবাই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ। তবে দলের কেউ অন্য দলের কারও পক্ষে প্রচার চালালে এটা তারা ব্যক্তিগতভাবে করছেন।