তারুণ্য শক্তির অপচয় রোধ করা দরকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

যুগে যুগে দেশে দেশে যে কোনো জাতির অগ্রগতির মূল চালিকাশক্তি সে দেশের তরুণ সমাজ। বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসে তরুণদের অবদান ছিল অবিস্মরণীয়। কালের আবর্তে তরুণ সমাজ আজ অনেকটাই বিবর্ণ ও বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। দেশের অধিকাংশ তরুণ কিশোর তাদের জীবনের মূল্যবান সময়ের অপচয় করছে অবলীলায়। প্রযুক্তির উন্নয়নে টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন বিনোদন ও যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। টেলিভিশন গ্রামাঞ্চলে এমনকি ছোট-বড় সব শহরে চায়ের দোকান কিংবা মুদির দোকানে দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে উঠতি বয়সের তরুণ কিশোররা দীর্ঘ সময় ধরে ডিশ-এন্টেনার বদৌলতে সিনেমা, নাটক, কার্টুন ছবি দেখে দেখে কখনো বা গ্যাং কালচার করে, মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আবার কখনো বা স্মার্টফোনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে প্রবেশ করে যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারছে বিনা বাধায়। শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তথ্যের অবাধ আদান-প্রদান, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়, খোশগল্প ইত্যাদির মাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করছে। যে বয়সে নিজেকে গড়ে তোলা ও পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ার কিংবা খেলাধুলা করার কথা সে বয়সে তারা টেলিভিশন ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে জীবনের মূল্যবান সময়ের অপচয় করছে। প্রশ্ন জাগে- তরুণ কিশোররা স্মার্টফোনের সিমকার্ড পায় কী করে আইডি কার্ড ছাড়া? নিশ্চয় পিতা-মাতা অথবা কোনো স্বজনের নামে ক্রয় করে তা সন্তানের হাতে তুলে দেয়া হয়? তরুণদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়া পিস্তল কিংবা বন্দুকের মতোই ভয়ঙ্কর। বন্দুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আছে। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে পর্নোছবি, ক্রাইমছবি, অশালীনতা দেখে দেখে জড়িয়ে পড়ছে সব ধরনের অনাচারের সঙ্গে, উসকে দিচ্ছে শঠতা, হিং¯্রতা ও পৈশাচিকতা।

তারুণ্য এখন বিভ্রান্ত। যে তরুণরা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জাতীয় আশা-আকাক্সক্ষার ধারক-বাহক সেই তরুণ সমাজ আজ ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। তাদের পথ দেখানোর যেন কেউ নেই, নেই অনুপ্রাণিত করার মতো কোনো মহৎ প্রাণ মানুষ। তাদের এই ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনা এখন আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তরুণ কিশোররা কতটুকু নৈতিক, মানবিক এবং জীবনমুখী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করছে তা সচেতন ব্যক্তিমাত্রই বুঝতে পারেন। তাই তারুণ্যের সমস্যাগুলো অনুধাবন করে তা সমাধানে উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে, বিশেষ করে তরুণদের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা যায় কিনা। ইতোমধ্যে সরকার, বিভিন্ন সংগঠন, উন্নয়ন সংস্থা তরুণ তথা যুবসমাজকে নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বটে, কিন্তু তার সফল বাস্তবায়ন করতে হলে জনপ্রতিনিধিদের গতানুগতিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক ও নৈতিক উন্নয়ন কাঠামো প্রণয়ন করে ত্রৈমাসিক মূল্যায়ন করতে স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে আলোচনা সভা, সেমিনার ও কর্মশালার মাধ্যমে এলাকার তরুণ তথা যুবসমাজ ও অভিভাবকদের সচেতন করে তোলা যায় কিনা বিষয়টি সরকারের দ্রুত ভেবে দেখা দরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সমাজ সংস্কারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারেন তাহলে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা তরুণদের উন্নয়নে কাজ করতে পারবেন না কেন? যে তরুণ সমাজের অতীতে বর্ণাঢ্য ইতিহাস রয়েছে, সে তরুণ সমাজ অনাদরে, অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাবে- তা আমরা কখনোই চাই না। তাদের অতীত গৌরব ফিরিয়ে আনতে দল-মত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করে সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রত্যয়ে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তরুণরা জাতীয় জীবনের মূল চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়।

মো. রেজাউল ইসলাম বাবু : শিক্ষক,রাণীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027968883514404