তালা খোলে খুদে শিক্ষার্থীরা শিক্ষক আসেন ১০টার পর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ঘড়ির কাটায় সকাল ৯টা বেজে ২৫ মিনিট। উড়ানো হয়নি জাতীয় পতাকা। কয়েকজন কোমলমতি শিক্ষার্থী মিলে বারান্দার গ্রিল, অফিসকক্ষ ও সৌচাগারের তালা খুলছে। তখনও আসেননি শিক্ষক- কর্মচারী কেউ। 

৯টা ৩৪ মিনিটের সময় বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরি কাম দপ্তরি এসে পতাকা উত্তোলন করেন। আর শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকদের জন্য অপেক্ষা করছে প্রাক-প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। অবশেষে শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে এসে পৌঁছান সকাল ১০টারও পরে। 

গত রোবার কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ৫৩ নং এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। অথচ নিয়মানুযায়ী সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যে বিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মচারী উপস্থিত থাকার কথা।

তদারকির অভাবে বিদ্যালয়টিতে এমন অনিয়মের চিত্র নিত্যদিনের বলে জানান স্থানীয়রা। বিদ্যালয়টি ৮ নং যদুবয়রা ইউনিয়নে অবস্থিত। অফিস কক্ষের তালা খোলার সময় দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বলে, বাচ্চু চাচা (দপ্তরি) একটু পরে আসেন। সেজন্য দপ্তরির বাড়ি থেকে চাবি এনে তারা নিজেরা বিদ্যালয়ের তালা খুলছে। তাদের ভাষ্য, সপ্তাহের অধিকাংশ দিনই শিক্ষার্থীরা তালা খুলে শ্রেণী কক্ষে বসে থাকে। পরে দপ্তরি ও শিক্ষকরা আসেন।

শিক্ষকদের অপেক্ষায় বসে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র মো. আজিব বলে, তার স্কুলে মাত্র দুইজন শিক্ষক আছে। ১০টার দিকে ক্লাস শুরু হয়। তার ভাষ্য, সেও এসে মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ের তালা খোলে।

তবে শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরি কাম দপ্তরি মো. তারিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, তিনি নিজেই প্রতিদিন বিদ্যালয়ের তালা খোলেন। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তার আসতে দেরি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্কুল পাড়ার এক বাসিন্দা জানান, স্কুল খোলার ঠিক ঠিকানা নেই। শিক্ষকরা প্রায় দেরি করে আসেন। দিনে দিনে স্কুলটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বিঘা জমির ওপর ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রতিষ্ঠিত ওই বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১২ জন। বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুইজন। তন্মধ্যে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন। যিনি অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত থাকেন। আর একজন সহকারী শিক্ষক চালিয়ে নিচ্ছেন পাঠদান কার্যক্রম। এতে স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি। এসব বিষয়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. তারেক রহমান বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট প্রকট। প্রধান শিক্ষক ব্যস্ত থাকেন অফিসের নানান কাজে। সারাদিন তিনি একাই ক্লাস নেন। তার ভাষ্য, তিনি কুষ্টিয়া শহর থেকে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাওয়া আসে করেন। আজ তার মোটরবাইকটি পথে নষ্ট হওয়ায় বিদ্যালয়ে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে।

আর বৃষ্টির দোহাই দিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি গতকাল শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন। বৃষ্টির কারণে সেখান থেকে আসতে দেরি হয়েছে। বিদ্যালয়ে সাংবাদিক এসেছে - এমন খবরে দ্রুত চলে আসলাম। তবে শিক্ষার্থীদের তালা খোলার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই বিদ্যালয় খুলতে হবে এবং শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থীদের উপস্থিত হতে হবে। আর তালা খুলবেন দপ্তরি। যদি এর কোন ব্যত্যয় ঘটে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে দুই শব্দে অধ্যক্ষের পদত্যাগ! - dainik shiksha দুই শব্দে অধ্যক্ষের পদত্যাগ! বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে পাকিস্তান - dainik shiksha বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে পাকিস্তান বিএনপি নির্বাচিত হলে গুম প্রতিরোধে আইন করব: তারেক - dainik shiksha বিএনপি নির্বাচিত হলে গুম প্রতিরোধে আইন করব: তারেক ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলীর মৃত্যু শ্বাসরোধে: মেঘালয় পুলিশ - dainik shiksha ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইসহাক আলীর মৃত্যু শ্বাসরোধে: মেঘালয় পুলিশ ঢাবিতে যোগ দিলেন চাকরিচ্যুত অধ্যাপক ড. সাইফুল - dainik shiksha ঢাবিতে যোগ দিলেন চাকরিচ্যুত অধ্যাপক ড. সাইফুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024609565734863