তালা ঝোলানোর কর্মসূচিতে অনেক স্থানেই ক্লাস চালু

রুম্মান তূর্য |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষক নেতারা। গতকাল রোববার থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিলো। তবে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুল-কলেজে এদিন ক্লাস চলেছে। যদিও জেলা পর্যায়ের কিছু-কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো।  

এদিকে গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে গতকাল সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষ্যনীয়। দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা অবস্থা নেয়ায় পল্টন থেকে কদম ফোয়ারামুখী সড়কের এক পাশ বন্ধ হয়ে গেছে।

এর আগে সরেজমিনে রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ী এলাকার সবুজ বিদ্যাপীঠ স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, ক্লাস চলছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও বিটিএর সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওসার আহমেদ গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খা হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন, রোববার থেকে প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালানো হবে। দাবি আদায় না হওয়া অবধি তালা ঝোলানো থাকবে।  

তবে এই কর্মসূচির প্রথম দিনে গতকাল দুপুর সোয়া বারোটার দিকে প্রতিষ্ঠানের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে চলছে জাতীয় সংগীত। সড়কে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা হলে তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, প্রভাতী শাখায় ছাত্রীদের ক্লাস হয়েছে। দিবা শাখায় ছাত্রদের ক্লাস চলবে। প্রতিষ্ঠানের ডান পাশের সড়কে গিয়েও দেখা গেছে, ভেতরে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিএর সাধারণ সম্পাদক শেখ কাউসার আহমেদ দাবি করেন, প্রতিষ্ঠানের ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা নেয়া হয়েছে, ক্লাস চলেনি। শুক্রবার কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার শিক্ষার্থীদের জানানো যায়নি।

পরে যাত্রাবাড়ীর করাতিটোলা সি এম এস মেমোরিয়াল হাইস্কুল ও কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস চলছে। দ্বিতীয় তলায় এক শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান কম্পাউন্ডেই অবস্থিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেও চলছে ক্লাস।

করাতিটোলা সি এম এস মেমোরিয়াল হাইস্কুলের অধ্যক্ষ পদে আছেন বিটিএর কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. বজলুর রহমান মিয়া। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা বিষয়টি নিশ্চিত করে দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে দাবি করেন, শিক্ষার্থীরা চলে আসায় তাদের বসতে দেয়া হয়েছে, ক্লাস চলছে না। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ও বিটিএর কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. বজলুর রহমান মিয়াও দৈনিক আমাদের বার্তাকে একই কথা বলেন। শুক্রবার কর্মসূচি ঘোষণা হওয়ার শিক্ষার্থীদের বিষয়টি জানানো যায়নি। তাই ছাত্রীদের নিরপত্তার চিন্তায় তাদের ক্লাস বসানো হয়েছে। রোববার করাতিটোলা সি এম এস মেমোরিয়াল হাইস্কুলে ক্লাস চলেনি।

তবে শিক্ষকদের কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো।   

দৈনিক আমাদের বার্তার কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি তানভীর আহমেদ তুষার জানান, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার আরজত আতরজান উচ্চ বিদ্যালয়, বিন্নাটী আব্দুল মজিদ মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস হয়নি। 

দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থানরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বাইরে থেকে এসেছেন। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার থেকে আসা এক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নেতারা যদি নিজেদের প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে আমাদের দূর-দূরান্ত থেকে নিয়ে আসেন তা ঠিক নয়। যে কর্মসূচি আমি পালন করতে পারবো না, তার জন্য অন্যকে ডাকবো কেনো।

গত মঙ্গলবার থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে শুরু হওয়া লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে গত বুধবার রাতে আন্দোলন আরো কঠোর করার ঘোষণা দেন বিটিএ নেতারা। শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানান, রোববার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলানো হবে। তারা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষকদের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চলা অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। 

বিটিএ নেতারা বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের থেকে এক ধাপ নিচে বেতন দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবত অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের বিকল্প নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি কোষাগারে জমা নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণ করতে সরকারের খুব বেশি অর্থ ব্যয় হবে না।

 

শিক্ষার সব খবর সবারআগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকদের আগস্ট মাসের এমপিওর চেক ছাড় মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি - dainik shiksha মাই*রা শ্যাষ কইরা দেন, শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন দুই ভিসি আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha আমি আশ্বাস দিচ্ছি, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপদেষ্টা গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর - dainik shiksha গুচ্ছের ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ ধাপের ভর্তি ৩ সেপ্টেম্বরের পর অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রকিব উল্লাহ শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী - dainik shiksha শিক্ষাগুরুর মর্যাদা কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে বাদ দিয়েছিলেন কামাল চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত - dainik shiksha সোমবার রাত ৮টা পর্যন্ত চিকিৎসকদের শাটডাউন স্থগিত শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন : এহছানুল হক মিলন পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন ৪৯ হিন্দু শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038180351257324