তিনি স্কুলের জমিদার বটে!

কাউখালী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি |

কাউখালী উপজেলার ৪৭নং মধ্য শিয়ালকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিদাতা মোহাম্মদ ইউনুস মোল্লার অত্যাচারে অতিষ্ঠ শিক্ষকরা। তিনি স্কুলের শিক্ষকদের ওপর নানা ধরনের অযাচিত খবরদারি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবারও (৫ সেপ্টেম্বর) এমনই এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়েছেন এ জমিদার।

স্কুল সূত্রে জানা গেছে, ওই দিন ১২টার পরে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মোহাম্মদ ইউনুস মোল্লা স্কুলে আসেন। তারপর প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে টেবিলের ওপর পা তুলে শিক্ষকদের নানা রকম আদেশ নির্দেশ করতে থাকেন। এ সময় শিক্ষকদের সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) সাবিনা ইয়াসমিনকে জুতা নিয়ে মারতে ওঠেন ইউনুস মোল্লা। অন্যান্য শিক্ষকরা এ ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়েন।

সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, জমিদাতা ইউনুস মোল্লা বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে এসে তার কাছে স্কুলের স্টিল আলমিরার চাবি চান। তিনি চাবি দিতে অস্বীকার করায় তার ওপর ক্ষেপে গিয়ে তাকে নানা রকম অশ্লীল মন্তব্য করেন এবং একপর্যায়ে ইউনুস মোল্লা তার পায়ের জুতা খুলে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের সামনেই তাকে মারতে উদ্যত হন।

এ সময় ইউনুস মোল্লার উচ্চস্বরে হুমকি ধামকির এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয় বলে জানা যায়। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের এ অপমানের বিচার চেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। বিদ্যালয়ের বর্তমান ভাপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজা আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ ঘটনার বিচার দাবি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।

জানা যায়, বিদ্যালয়ের জমি দাতা সদস্য আমেরিকা প্রবাসী মো. ইউনুস মোল্লা কয়েকদিন আগে বাড়িতে আসেন। গত ২ সেপ্টেম্বর তিনি বিদ্যালয়ে এসেই শিক্ষক হাজিরা খাতা নিয়ে হাজিরা খাতায় উল্টাপাল্টা মন্তব্য লেখেন। এরপর শিক্ষকদের নানাভাবে ধমকাতে থাকেন।

এসময় তিনি বলেন, ‘আমি স্কুলের জমিদাতা সদস্য। এই স্কুল আমার, আমার বাপ দাদার। আমি যেভাবে যা বলব শিক্ষকদেরকে তা শুনতে হবে।’ এসব কথা বলে শিক্ষকদের বিভিন্ন ধরনের আদেশ নির্দেশ করতে থাকেন তিনি। তিনি এও বলেন, যে ক’দিন তিনি বাড়িতে থাকবেন সে ক’দিন প্রতিদিনই তিনি স্কুলে আসবেন এবং তার কথামতো শিক্ষকদের চলতে হবে। সেই থেকে তিনি প্রতিদিনই দু’ তিনবার করে স্কুলে আসেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বরও তিনি স্কুলে এসে একইভাবে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসে জুতাসহ দুই পা টেবিলের ওপর তুলে বসেছিলেন। স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকজন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বয়স বাড়ার কারণে তিনি হয়তো মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল হাকিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ছাড়া শিক্ষক হাজিরা খাতায় অন্য কেউ মন্তব্য লেখার অধিকার রাখেন না। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’

উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মিয়া মনু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি তিনি লোকমুখে শুনেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022780895233154