তিন বছর ধরে বন্ধ নোবিপ্রবির ১০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ

নোয়াখালী প্রতিনিধি |

নানা জটিলতায় বন্ধ রয়েছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ১০ তলার একাডেমিক ভবন-৩-এর নির্মাণকাজ। পাঁচ বছরের বেশি সময়েও কাজ শেষ না হওয়ায় ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে ভবনটি। মরিচা ও শ্যাওলায় নষ্ট হচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। শ্রেণীকক্ষ সংকটে বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জটিলতার বলি হয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে নতুন ডিপিপি। পাস হলেই পুনরায় শুরু হবে ভবন নির্মাণকাজ। 

সরজমিন দেখা গেছে, লতা-পাতায় ঢেকে আছে নির্মাণাধীন ভবন। লোহার রডে মরিচা ধরেছে, ইটের গাঁথুনিতে শেওলা জমেছে। দেখলে মনে হবে এটি পুরনো কোনো পরিত্যক্ত ভবন। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থাকায় ভবনের অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে শ্রেণীকক্ষ সংকটে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে নন-একাডেমিক ভবনে। বাধ্য হয়ে নির্মাণাধীন ভবনেও ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। ক্লাসের পাশাপাশি ব্যাহত হচ্ছে গবেষণাকাজও। 

  

কথা হয় ইসরাত জাহান শিলা, হিমেল দাস, নাসের উদ্দিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা বলেন, পাঁচ-ছয় বছর পর্যন্ত শ্রেণীকক্ষ সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষ ও গবেষণাগারের জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলন করেও কোনো ফল পায়নি। একাডেমিক ভবনের বাইরে প্রশাসনিক, বিএনসিসি, লাইব্রেরি, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ভবনে গিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। দেখা যায় বেশির ভাগ সময় ক্লাসের জন্য বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। কোনো কোনো সময় দাঁড়িয়ে থেকেও ক্লাস না করে ফিরে যেতে হয় তাদের। এতে নির্দিষ্ট সময় পরীক্ষাও শেষ হয় না। একাডেমিক পরিবেশে ক্লাস করতে না পেরে হতাশ তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বলছে, নোবিপ্রবির ১০ তলা একাডেমিক ভবন ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে। চুক্তি অনুযায়ী শেষ হওয়ার কথা ২০২১ সালের মাঝামাঝি। ভবনটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ১১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা, যার মধ্যে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৩১ কোটি টাকারও বেশি। যৌথভাবে জিকেবিএল ও বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং নির্মাণ প্রতিষ্ঠান দুটি কাজটি করছে। অভিযোগ ওঠে, কভিডের দোহাই দিয়ে ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত কচ্ছপ গতিতে কাজ করে তারা। মার্চ-পরবর্তী কাজ রেখেই অনেকটা গা-ঢাকা দেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন। আবার অর্থ পাচার ও টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগে গ্রেফতার হন জিকে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী জিকে শামিম। একপর্যায়ে পুরোই বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। পরবর্তী সময়ে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে অফিশিয়ালি চুক্তি বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিনেও ভবন নির্মাণ না হওয়ার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের খামখেয়ালিপনাকেও দুষছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

বাণিজ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ জানান, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণাধীন অবস্থায় পড়ে আছে। অথচ এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে। তার দৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এর দায় এড়াতে পারে না। একদিকে নির্মাণাধীন ভবন পড়ে আছে, অন্যদিকে শিক্ষকদের বসার স্থান নেই। শিক্ষার্থীদেরও নিরবচ্ছিন্নভাবে ক্লাস করার সুযোগ দিতে পারছে না প্রশাসন। এজন্য তিনি প্রশাসনের খামখেয়ালিপনাকে দুষছেন, একই সঙ্গে দ্রুত নির্মাণাধীন ভবনের কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন এ শিক্ষক।

অবশ্য দায় এড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জটিলতার বলি হয়েছেন তারা। থেমে নেই কর্তৃপক্ষ। নতুন উন্নয়ন প্রস্তাবনা প্রকল্প (ডিপিপি) জমা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। দ্রুত ডিপিপি পাস হলেই পুনরায় কাজ শুরু হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার উল-আলম বলেন, ‘আমরা বসে নেই। ইউজিসি, সচিবালয়, মন্ত্রণালয় সব জায়গায় ধরনা দিচ্ছেন তারা। এরই মধ্যে নতুন করে ডিপিপি প্রস্তুত করে তা জমা দিয়েছেন। এটি সবুজ পাতাভুক্ত হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পটি পাস হলে নতুন করে কাজ শুরু হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে - dainik shiksha অধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন সভাপতির একক স্বাক্ষরে জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ - dainik shiksha জোর করে পদত্যাগ, ভালো নেই স্ট্রোক করা সেই অধ্যক্ষ বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর - dainik shiksha বরিশালে থানায় শিক্ষার্থীদের হামলা-ভাঙচুর হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা - dainik shiksha হাজিরা মেশিন কাজে আসেনি ১৬৯ বিদ্যালয়ে, গচ্চা ৩৭ লাখ টাকা পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল - dainik shiksha পদ্মার ভাঙনে বিলীনের শঙ্কায় দুই স্কুল কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034298896789551