তিন বছর ধরে স্কুলে না এসেও বেতন তুলছেন কম্পিউটার শিক্ষক

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় হাজী মতিউর রহমান সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক নিয়োগকাল থেকে তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত আছেন। এর পরও খাতায় তাঁর উপস্থিতির অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, উপজেলার বৈদ্যের বাজার ইউনিয়নে হাজী মতিউর রহমান সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান বিদ্যালয় সভাপতি হাজী মতিউর রহমানের পুত্রবধূ সানজিয়া ইয়াসমিন। তাঁর নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবু তালেব নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করেননি। নিয়োগের পর থেকে বিদ্যালয়ে না এসেও হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে নিয়মিত বেতন তুলে নিচ্ছেন সানজিয়া।

বিদ্যালয়ের এক জেএসসি পরীক্ষার্থী বলে, ‘সানজিয়া ম্যাডাম নামে কাউকে দেখি নাই, চিনি না।’ স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ২০০৩ সালে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা অনিয়ম করছেন হাজী মতিউর রহমান। তিনি নিজে সভাপতি, ছেলে মাকসুদুর রহমান প্রধান শিক্ষক, আরেক ছেলে মাহমুদুর রহমান সরকার সহকারী শিক্ষক, ছেলের (মাহমুদুর) বউ সানজিয়া কম্পিউটার শিক্ষক। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠাতা ও দাতা সদস্য পদে তাঁর পরিবারের পাঁচজনের নাম পাওয়া গেছে।

বৈদ্যের বাজার ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, মাকসুদুর রহমান ২০১৪ সালে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেও তাঁর নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ভর্তি ফি, পরীক্ষার ফিসহ উন্নয়নের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক। অতিরিক্ত ফি নেওয়ায় গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। এসব বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন।

স্থানীয় আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বিদ্যালয়ের নামে ৩৭ শতাংশ জমি দান করার দুই বছর পর জানতে পারি জমিটি মতিউর রহমান নিজের নামে সাফকবলা করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছি।’

হাজী মতিউর রহমান বলেন, ‘জমিটি আমি আজিজুলের কাছ থেকে নগদ টাকায় সাফকবলা দলিলের মাধ্যমে ক্রয় করেছি। তা ছাড়া বিদ্যালয়ে কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি নেই। সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০০৯ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অনুমতি নিয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ইংল্যান্ড গিয়েছিলাম।’ সানজিয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। তাঁর ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও বিদ্যালয়ে হাজির না হওয়ার কারণ দর্শানোর নোটিশ করব। তারপর হাজির না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি সানজিয়াকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা - dainik shiksha জাল সনদেই সরকারকে হাইকোর্ট, নয় শিক্ষক অবশেষে ধরা মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি - dainik shiksha মা*রা গেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার - dainik shiksha ইরানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেবেন মোখবার এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন ৩ হাজার শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029199123382568