বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট চলছে গত কয়েকবছর ধরে। এ সংকট কাটাতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে তিন মাস পর পর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির ক্ষমতা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। তথ্য যাচাইয়ে ব্যানবেইস, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহয়তা নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে এনটিআরসিএকে। একইসঙ্গে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের সমপদে নিয়োগের সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে।
এসব বিষয় জানিয়ে পরিপত্র জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। গতকাল রোববার পরিপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে অনুসরণীয় প্রক্রিয়া এ পরিপত্রে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ পরিপত্র জারির সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর ও ৩০ ডিসেম্বর জারি করা পরিপত্র বাতিল করা ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয়।
শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি পরিবর্তন :
নতুন পরিপত্র অনুসারে শিক্ষক পদ শূন্য হলে আর শূন্যপদের পদের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া শুরুর অপেক্ষা করতে হবে না প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। পরিপত্রে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ম্যানেজিং কমিটি-গভর্নিং বডির অনুমোদনক্রমে প্রথম প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে পদ শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামোতে সরকার নির্ধারিত কোটার প্রাপ্যতা উল্লেখ করে উপজেলা বা থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে এনটিআরসিএতে অনলাইনে চাহিদা পাঠাবেন। অনলাইনে চাহিদা পাঠানোর জন্য এনটিআরসিএর সংশ্লিষ্ট ওয়েবলিংক খোলা থাকবে। শূন্যপদের সঠিকতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ প্রয়োজনে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহায়তা গ্রহণ করবে।
তিন মাস পর পর শিক্ষক নিয়োগ :
পরিপত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বলছে, শূন্যপদের চাহিদা প্রাপ্তি সাপেক্ষে এনটিআরসিএ প্রয়োজনে তিন মাস অন্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে পারবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত চাহিদা অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে প্রাপ্ত শূন্যপদের ভিত্তিতে ওয়েবসাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করবে এবং নিবন্ধিত প্রার্থীরা বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পনের দিন বা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করবেন।
আবেদন শেষ হওয়ার ১০ দিন পর প্রার্থী নির্বাচন :
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনলাইনে আবেদন গ্রহণের সময় শেষ হওয়ার পরবর্তী দশ দিনের মধ্যে শূন্যপদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি পদের বিপরীতে প্রার্থীদের পছন্দ ও মেধার ভিত্তিতে এনটিআরসিএ একজন করে প্রার্থী নির্বাচন করবে এবং তা প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করবে। এনটিআরসিএ প্রয়োজনে প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য তথ্যে সঠিকতা যাচাইয়ের জন্যে তথ্য, সার্টিফিকেট বা সনদ নির্বাচিত প্রার্থীকে দাখিল করতে বলতে পারবে। কেউ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বা চাহিত তথ্য প্রদান না করলে তাকে সুপারিশের জন্য বিবেচনা করা হবে না।
প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফলের পর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শূন্যপদে প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় অনলাইনে শূন্যপদের চাহিদা পাঠাবে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন :
তৃতীয় ও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির নিয়োগ প্রক্রিয়ার মতোই শিক্ষক নিয়োগের পুলিশ ভেরিফিকেশনের সুযোগ রাখা হয়েছে নতুন পরিপত্রে। মন্ত্রণালয় বলছে, এনটিআরসিএ প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের ভি রোল ফরম পূরণ করে দাখিল করতে হবে। দাখিল করা ফরম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষ সেবা বিভাগের পাঠানো হবে। ভি আর ফরম দাখিল না করলে নিয়োগ সুপারিশের জন্য বিবেচনা করা হবে না।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, পুলিশ প্রতিবেদন প্রাপ্তি বা পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান অবস্থায় শর্ত সাপেক্ষে নিয়োগ সুপারিশ দেয়ার বিষয়ে সরকারের পূর্বনুমোদন ভিত্তিতে নিয়োগ সুপারিশ করে প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জানাবে। সে হিসেবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডি সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীকে এক মাসের মধ্যে নিয়োগ পত্র দেবে।
ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের সমপদে নিয়োগের সুযোগ বন্ধ :
পরিপত্রে মন্ত্রণালয় বলছে, ইনডেক্সধারী বা কর্মরত শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সমপদে নিয়োগ সুপারিশের পুনঃআবেদন বিবেচনা করা হবে না। তবে, কর্মরত পদ ব্যতীত অন্য কোনো উচ্চতর বা নিম্নতর পদের জন্য এনটিআরসিএর প্রত্যয়নপত্র থাকলে ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা অন্য পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতা-বয়স না থাকলে প্রার্থী অযোগ্য :
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কোনো প্রার্থীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য সর্বশেষ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে বা সংশ্লিষ্ট বিষয় ও পদের জন্য এনটিআরসিএ প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র না থাকলে বা এনটিআরসিএ প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্রের মেয়াদ (উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা আদালত কর্তৃক নির্ধারিত) উত্তীর্ণ হলে বা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের জন্য সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বয়সসীমা উত্তীর্ণ হলে প্রার্থী নিয়োগ সুপারিশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
কিছু বিষয় থাকছে আগের মতোই :
এছাড়া এ পরিপত্রে কিছু বিষয়ে আগের মতোই রাখা হয়েছে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য বছরে একবার শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ, আগের মতোই প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সমন্বয়ে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা আয়োজন ও জাতীয় মেধাতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করাসহ কয়েকটি বিষয় আগের মতোই রাখা হয়েছে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।