তিন হাজার বেসরকারি স্কুলে ৭ ক্যাটাগরিতে আধুনিক ভবন হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশের সব সংসদীয় এলাকায় দশটি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি করে আধুনিক শিক্ষা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। সাতটি ক্যাটাগরিতে এসব ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি একাডেমিক ভবনে পৃথক প্রকল্পের মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে হাওর, বিল ও নদী ভাঙনকবলিত এলাকা এবং পাহাড়ি এলাকায় স্কুল ভবন বিশেষ ব্যবস্থায় নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণারও ব্যবস্থা থাকবে।

সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রেখে ৩০০টি সংসদীয় এলাকায় ১০টি করে মোট তিন হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চারতলা, পাঁচতলা ও ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন একাডেমিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর’ (ইইডি)। সংস্থাটি আগামী মাসেই তিন হাজার স্কুল ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা বলেন, ‘প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে বন্যায় হাওড়-নদী ভাঙনের কবলে পড়ে, ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাহাড়ি এলাকা। ঘূর্ণিঝড়েও ক্ষতিগ্রস্ত হয় গ্রামাঞ্চল। এসব বিষয় মাথায় রেখেই দেশের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে এমনভাবে একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে যাতে, সেগুলোকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা যায়।’

আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার নিশ্চিত করে সম্পূর্ণ নান্দনিক ডিজাইনে তিন হাজার স্কুল ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনার আলোকে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণের ডিজাইন তৈরি করা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে তা অনুমোদনও করেছেন।’ অপর একটি প্রকল্পের মাধ্যমে (আইসিটি) এসব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমও স্থাপন করা হবে বলে জানান প্রধান প্রকৌশলী।

প্রকল্প দলিলে (ডিপিপি) বলা হয়েছে, মোট সাতটি ক্যাটাগরিতে তিন হাজার স্কুল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ক্যাটাগরি-১ অর্থাৎ সিটি করপোরেশন ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় ২ হাজার ১৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একটি করে চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা ভবন নির্মাণ করা হবে। ক্যাটাগরি-২ এর মাধ্যমে সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০০টি ছয়তলা ভিত বিশিষ্ট ছয়তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ক্যাটাগরি-৩ অর্থাৎ পাহাড়ি এলাকায় ৫০টি স্কুল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো হবে চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা ভবন।

ক্যাটাগরি-৪ এর মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় ১৫০টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৫০টি স্কুলে নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা ভিত বিশিষ্ট পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ভবন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র-কাম-শ্রেণীকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

ক্যাটাগরি-৫ অর্থাৎ হাওড়, বিল, নদী বিধৌত এলাকায় ৫০টি স্কুলে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোতেও নিচতলা ফাঁকা রেখে পাঁচতলা ভিত বিশিষ্ট পাঁচতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ৫০টি ভবনকে শ্রেণীকক্ষের পাশাপাশি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

ক্যাটাগরি-৬ এর মাধ্যমে লবণাক্ত এলাকায় ১৭৫টি একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো হবে চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা ভবন। এগুলোতেও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে।

আর ক্যাটাগরি-৭ অর্থাৎ নদী ভাঙনকবলিত এলাকায় (রিমোভ্যাল স্ট্রাকচার) ২৫টি স্কুলে স্থানান্তরযোগ্য সেমিপাকা স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হবে।

গত ১৬ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সারা দেশের তিন হাজার স্কুলের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের মোট ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি ৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছে গত বছরের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন নাগাদ।

ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও প্রতিটি ভবনের বারান্দা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, পানির সরবরাহ, মেয়েদের জন্য পৃথক কমনরুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট ও র‌্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। আর ভবনের ঢালু ছাদ ও ছাদে টালির ব্যবস্থা রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বর্ধিত চাহিদা পূরণ ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে জানিয়ে দেওয়ান মো. হানজালা বলেন, ‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে, ঝরে পড়ার হার হ্রাস পাবে, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হবে এবং দেশের তৃণমূল পর্যায়েও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৩২৭টি সরকারি ও ১৯ হাজার ৩৫৭টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রায় ৯১ লাখ ৬০ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.013132095336914