তীব্র তাপপ্রবাহে বেড়েছে তাল পাখার চাহিদা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বগুড়া : হাতে বানানো পাখার ব্যবহার অনেকটাই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কমে গেছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য তালপাখা। তবে  সারাদেশে তীব্র তাপপ্রবাহে তালপাখার চাহিদা বেড়েছে। এখন মানুষ শখ করেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য তাল পাখা ক্রয় করে। একদিকে তীব্র গরম, অন্যদিকে মানুষের শখ মেটাতে বেড়ে গেছে তালপাখার কদর। আর এই পাখা তৈরি করে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন  দেখছেন বগুড়ার কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা। তারা বাড়ির উঠোন,  পুকুর পাড়, রাস্তার দু’ধারে গাছের ছায়ায় বসে গল্প করতে করতে তৈরি করেন তালপাতার পাখা। এই তালপাখা তৈরি করতে তাদের নিতে হয়নি কোনো প্রশিক্ষণ। চোখে দেখেই বছরের পর বছর ধরে এভাবে সুঁই, সুতা ও তালপাতা দিয়ে পাখা তৈরি করছেন বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের অড়োলা, আতালপাড়া, যোগীরভবন, কর্ণিপাড়া গ্রামের পাঁচশতাধিক পরিবার।  এখানকার শত শত নারী-পুরুষ দৃষ্টিনন্দন এই পাখা তৈরি করে নিজের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে।

জানা যায়, প্রায় ৫০ বছর ধরে তালপাখা তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত তারা। পাখা তৈরির জন্য এই গ্রামগুলো এখন পাখার গ্রাম হিসেবেও পরিচিত। মূলত বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ ও চৈত্র মাসে যখন গরম বৃদ্ধি পায়, তখন তাল পাখার চাহিদাও বাড়ে। আর এখানকার পাখা যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

পাখা তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালপাতা দিয়ে মোট পাঁচ ধরনের পাখা তৈরি করেন তারা। এগুলো হলো ডাটা পাখা, হাতল পাখা, ঘুরকি পাখা, পকেট পাখা ও আমান পাখা। এর মধ্যে প্রতি পিস হাতল পাখা পাইকারি বিক্রি করা হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকায় এবং পকেট পাখা বিক্রি করা হয় ১৬ থেকে ২০ টাকায়।

পাখা তৈরির বিষয়ে পাইকর ইউনিয়নের  ইউনুস  নামের এক কারিগর জানান, বগুড়া ও পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পৌষ মাসের শুরুতে তালপাতা কিনে আনেন তারা। প্রতিটি পাতা ডাগুরসহ কিনতে খরচ পড়ে পাঁচ থেকে দশ টাকা। এরপর সতর্কতার সঙ্গে এই ডাগরগুলোকে পাখার আকারে গোল করে কাটতে হয়। এরপর পানিতে ভিজিয়ে কয়েকদিন রোদে শুকাতে হয়। রোদে শুকানোর পর গুচ্ছ হয়ে থাকা পাতাগুলো বাঁশের কাঁটির মাধ্যমে প্রসারিত করা হয়। এরপর গোলাকার পাতাটি রঙ করে বাঁশের খিল দিয়ে দুপাশ আটকিয়ে সেলাই করা হয়।

কারিগর ইউনুস আরো জানান, সব মিলিয়ে প্রতিটি রঙিন পাখা তৈরি করতে তাদের ১০ টাকা খরচ হয়। এরপর প্রতি পিস পাখা ১৬ থেকে ২০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেন। দিনে একেকজন ১৫০টি পর্যন্ত পাখা তৈরি করতে পারে।

এখন গরম মৌসুমে নারী-পুরুষের পাখা তৈরিতে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শিশু-কিশোরেরাও এ মৌসুমেলেখাপড়া ও খেলাধুলার পাশাপাশি মা-বাবার সঙ্গে পাখার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন পাখা নিতে। আবার অনেকে কারিগরদের আগাম টাকা দিয়ে পাখা তৈরি করিয়ে নেন।

তালপাখা তৈরির নারী কারিগর শেফালি জানান, পুরুষরা শুধু পাতা নিয়ে এসে পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে শুকিয়ে দেয়। এরপর সেগুলোকে রঙিন সুঁই-সুতা দিয়ে সেলাই করে পাখার সম্পূর্ণ রূপ তারাই দেন। তবে বর্তমানে কাঁচামাল সংকট ও মুনাফা কম হওয়ায় গ্রামের অনেকে এই পেশা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। তবে এখনো সুঁইয়ের প্রতিটি ফোঁড়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুনে এই অঞ্চলের অভাবগ্রস্ত মানুষরা। 

বসির উদ্দিন নামের এক পুরাতন পাখা ব্যবসায়ী বলেন, আমরা পাখা ব্যবসায়ীরা চৈত্রের শেষের দিকে এসে এই গ্রামগুলো থেকে পাইকারি দরে পাখা কিনে নিয়ে যাই। এই বৈশাখী মেলায় পাখা মোটামুটি ভালো বিক্রি হয়। এই গ্রামগুলো থেকে পাখা নিয়ে যেয়ে আমরা বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে এবং শহরে বিক্রি করে থাকি। এই তালপাতার হাত পাখার কদর এখন অনেক বেশি থাকলেও তিনমাস পরে এর কদর অনেক কমে যায়। সবার ঘরে এখন বিদ্যুৎ আছে। বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার করে সবাই ঘরে ঘরে। বিদ্যুৎ বিভ্রান্তির কারষে এবার পাখার চাহিদা বেশি। একদিকে বিদ্যুৎ লোডশেডিং, অন্যদিকে প্রচন্ড গরম। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে মানুষ এখন ভরসা করছেন তালপাতার পাখার উপর। গরমের হাত থেকে বাঁচতে পাখা কিনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বগুড়াবাসী। এমন গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে হাতপাখারও চাহিদা। মধ্যবিত্তের কাছে এটাই যেন এখন একমাত্র ভরসা।

চাহিদা বাড়ায় পাখার দামও বেড়েছে। বছরের এ সময়ে পাখার চাহিদা থাকে। চৈত্র থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত বিক্রির মৌসুম হলেও চৈত্র ও বৈশাখেই পাখা বিক্রির উপযুক্ত সময়। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে - dainik shiksha একাদশে ভর্তিতে কলেজ পছন্দে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের - dainik shiksha ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: জুতার মালা শিক্ষককের ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডের এসএসসি: অসন্তুষ্টদের খাতা চ্যালেঞ্জ ১ লাখ ৮০ হাজার থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম - dainik shiksha থমকে আছে শিক্ষক বদলি কার্যক্রম প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান - dainik shiksha প্রশিক্ষক হতে শিক্ষকদের আবেদন আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063250064849854