তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ: পিএসসির অধীনে গঠিত হচ্ছে ‘অনুবিভাগ’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এখন থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধিদফতর, সংস্থার ১৩ থেকে ২০তম (পূর্বের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) গ্রেডের কর্মচারীদের নিয়োগ দেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। এসব পদে নিয়োগ দিতে পিএসসির অধীনে আলাদা অনুবিভাগ বা পদভিত্তিক ‘বিশেষ পুল’ গঠন করা হচ্ছে। রোববার (১৭ নভেম্বর) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পিএসসিকে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে পিএসসি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা এ সংক্রান্ত চিঠি পেয়েছি। এখনও তা কমিশনের সভায় উপস্থাপন করা হয়নি।

তবে এ বিষয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। অতীতেও পিএসসির কমিশন-১ এবং কমিশন-২ ছিল, সেগুলো দেখা হচ্ছে। অনুবিভাগ গঠনে কত জনবল লাগবে, কত ক্যাটাগরির লোক আসতে পারে, তাদের নিয়োগবিধি আলাদা হলে তার কী হবে? এসব নানা হিসাব নিকাশ রয়েছে। আমরা এসব বিষয়ে কাজ করছি।’

গত ২৪ অক্টোবর অর্থ বিভাগের এক পরিপত্রে বলা হয়- সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং অধিদফতর বা সংস্থায় বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ (পূর্বের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) পর্যন্ত পদে সরকারি কর্মচারী নিয়োগের জন্য পাবলিক বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাছাই কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না।

মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা অধীনস্থ দফতর সংস্থায় আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা বা প্রস্তাব করা যাবে না। তবে সেখানে এসব পদের নিয়োগ নিয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়- ‘সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর অধীনস্থ দফতার/সংস্থাগুলোর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল নিয়োগের জন্য সরকারি কর্মকমিশনের অধীনে একটি পৃথক অনুবিভাগ গঠন করা যেতে পারে।

পিএসসি বছরভিত্তিক একটি সমন্বিত পরীক্ষা গ্রহণ করে তৃীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের লক্ষ্যে পদভিত্তিক একটি পুল গঠন করতে পারে। মন্ত্রণালয়/বিভাগ এবং এর অধীনস্থ দফতার/সংস্থার চাহিদা অনুযায়ী কর্মচারী নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে।’ বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী সম্মতি দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পিএসসি সূত্র জানায়, এটি বাস্তবায়ন হলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের জন্য কোনো মন্ত্রণালয়কে আর নিয়োগের ঝামেলা পোহাতে হবে না। শুধু জনবল নিয়োগের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চাহিদাপত্র দেবে। চাহিদা অনুসারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে পিএসসি সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে।

তবে এই উদ্যোগ নেয়া হলে পিএসসির কাজের চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদের নিয়োগের জন্য আলাদা কমিশন হতে পারে। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদের গ্রেড ও যোগ্যতায় নানা ভিন্নতা রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ক্ষেত্রে গ্রেড ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অভিন্ন করতে হবে। নইলে জটিলতায় নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রশাসনবিষয়ক কলামিস্ট আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘এতে নিয়োগ বিলম্বিত হবে। এভাবে নিয়োগ কেন্দ্রীভূত করা ঠিক না। পিএসসি যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে। পিএসসি আর কত কাজ করবে। আলাদা অনুবিভাগ হলেও তো কমিশন একটাই থাকছে। সিদ্ধান্ত তো এক জায়গা থেকেই হবে। টেকনিক্যাল ক্যাডারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করাই ভালো। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টি পিএসসিতে আনা উচিত নয়।’

প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন প্রশাসনবিষয়ক বহু গ্রন্থের প্রণেতা ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া। তার মতে, আগেও পিএসসির দুটি ভাগ ছিল। কমিশন-১ এর দায়িত্ব ছিল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়া। আর কমিশন-২ এর দায়িত্ব ছিল তৃতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়া। স্বাধীনতার পর তৃতীয় শ্রেণির পদের নিয়োগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয় এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়ার দায়িত্ব পিএসসিরই থাকে।

এখন যে প্রস্তাব করা হচ্ছে এতে জটিলতা আরও বাড়বে। কারণ তৃতীয় শ্রেণির পদে কোনো কোনো গ্রেড তা এখনও মীমাংসিত নয়। এ ছাড়া তাদের গ্রেড ও শিক্ষাগত যোগ্যতাও এক নয়। কাজেই এসব পদে নিয়োগ দিতে গেলে একই পরীক্ষায় নিয়োগ দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য তাদের গ্রেড ও শিক্ষাগত যোগ্যতা অভিন্ন করতে হবে। আর চতুর্থ শ্রেণির পদ কোনো ক্লারিক্যাল জব নয়। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে অষ্টম বা দশম শ্রেণি পাস। তাদের কি পরীক্ষা নেবে পিএসসি। কাজেই সব বিষয়ও বিবেচনা করতে হবে।’

তবে তাদের সঙ্গে অনেকটাই ভিন্ন মত পোষণ করেছেন পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। তার মতে, নতুন দায়িত্ব দিলে চাপ নিলে চাপ বাড়বে। বিসিএস পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষা নিতে একটু সময় লাগবেই। গত ৫-৭ বছর ধরে প্রতি বছরই নিয়মিতভাবে পরীক্ষা এবং রেজাল্ট হচ্ছে। ক্যাডার ও নন-ক্যাডারদের জন্য আমরা পিএসসির সদস্যদের আলাদা আলাদা দায়িত্ব দিয়ে থাকি।

তেমনি প্রয়োজনে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগের জন্য আলাদা সদস্যদের দায়িত্ব দেয়া হবে। এ জন্য আলাদা ইউনিট কাজ করবে। আলাদা অনুবিভাগ গঠন করা হতে পারে। এর সঙ্গে বিসিএস পরীক্ষার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। একটি অনুবিভাগ গঠন করে দুই বা তিনজন সদস্যকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া যেতে পারে। তবে এসব কিছুই যাচাই-বাছাই চলছে। কমিশনের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028698444366455