তৃতীয় গ্রেড পেলেন নায়েমের ৩ জন : ফের বিশৃঙ্খলার চেষ্টা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনক্রমে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) দুইজন উপ-পরিচালককে পরিচালক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।  পদোন্নতি পাওয়ায় তারা জাতীয় বেতনস্কেলের তৃতীয় গ্রেডভুক্ত হলেন। তারা হলেন রোকসানা বিলকিস ও মো: সেলিমুজ্জামান। এছাড়াও আগেই নায়েমের পরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়া ড. আতিকুল ইসলাম পাঠানকেও তৃতীয় গ্রেড দেয়া হয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি পৃথক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে। এই তিনজন নায়েমের নিজস্ব কর্মকর্তা। বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজের স্বল্প সংখ্যক অধ্যাপক তৃতীয়গ্রেডভু্ক্ত। সরকারি কলেজ  শিক্ষকরা প্রেষণে  নায়েমের মহাপরিচালকসহ বিভিন্ন পদে পদায়ন পান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিধি মোতাবেক অনুষ্ঠিত সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে এ পদোন্নতি ও তৃতীয় গ্রেড প্রদান করা হলে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত কতিপয় শিক্ষক এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করার ধৃষ্টতা দেখাচ্ছেন। নবনিযুক্ত পরিচালকদের নতুন পদে যোগদান করতে বাধা দিচ্ছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা।

নায়েমের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত দশ বছর যাবত শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা নায়েমের স্থায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আসছেন। সব বিষয়ে তাদেরকে কোনঠাসা করে রাখছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেমনটা শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে করে থাকেন বি সি এস প্রশাসন ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা।

তিনজনের তৃতীয় গ্রেডপ্রাপ্তির বিরোধীতা করতে মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে কতিপয় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় গিয়েছিলেন বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, ‘আমাকে জোর করে মন্ত্রীর বাসায় নেয়া হয়েছে, তিনজনের তৃতীয় গ্রেড প্রাপ্তিতে আমার কোনও বিরোধীতা নেই।’ পহেলা মার্চ মন্ত্রী নায়েমে একটা অনুষ্ঠানে যাবেন বলে জানা যায়।

তৃতীয় গ্রেড প্রাপ্তির আদেশের কপি দেখুন: 

বিরোধীতাকারী কতিপয় কর্মকর্তা মন্ত্রীর সাবেক একজন এপিএসর নেতৃত্বে শিক্ষা প্রশাসনে গত নয় বছর যাবত নানা ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নায়েমে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তার উচ্ছৃঙ্খলতা কঠোর হস্তে দমনের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নির্দেশ পেয়ে প্রফেসর ড. আ ফ ম শফিকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।  কমিটির সদস্য-সচিব নায়েমের প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ মো: ইকবাল হোসেন। কিন্তু অদ্যাবধি  ওই তদন্ত শেষ হয়নি!

জানা যায়, গত বছরের ২৪শে আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবসহ অন্যান্য অতিথিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানের আগে ও পরে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছে সদ্য শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানকারী ও বুনিয়াদী প্রশিক্ষণার্থীরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্যসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। শিক্ষাসচিব্ মো: সোহরাব হোসাইনও উপস্থিত ছিলেন। 

নায়েম সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে এখানে শিক্ষা ক্যাডারের জুনিয়র কর্মকর্তারা কর্মরত সিনিয়রদের চামড়া তুলে নেয়ার স্লোগান দেন। ‘নো বি সি এস নো ক্যাডার’ লিখে ব্যানার বানানো হয়। শ্রমিক ইউনিয়নের অনুষ্ঠানের মতো ডজন ডজন ব্যানার টানানো ও তুলে নেয়া নিয়ে উচ্ছৃঙ্খলতা করায় ক্ষুব্ধ হন ক্যাডারের সিনিয়র কর্মকর্তারা। বি সি এস শিক্ষা সমিতির আসন্ন নির্বাচনে ভোট পাওয়ার আশায় জুনিয়রদের উসকানি দিয়েছে ২৪তম বি সি এস এর কতিপয় কর্মকর্তা যাদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সাবেক একজন এপিএসর রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নায়েমের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে বলেন,  তিন বছর আগে পিরোজপুরের একটি কলেজে প্রশাসনের ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা শিক্ষা ক্যাডারের একজন কর্মকর্তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শাস্তি দিয়েছিলেন। শাস্তি থেকে রেহাই দিতে পা ধরতে বাধ্য করা হয় শিক্ষা ক্যাডারের ওই কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা অনেক লেখালেখি করেন। আদালতেও গড়ায়। কিন্তু নায়েমে আমরা যারা স্থায়ী কর্মকর্তা -কর্মচারী তাদের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা পা ধরার চেয়েও নির্মম আচরণ করেন। অথচ তারাও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আমরাও।

তিনি আরও বলেন, তারা শিক্ষাজীবনে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় মেডিকেল, বুয়েটে ভর্তিতে চান্স পাননি। চাকরিজীবনে ফরেন ক্যাডার, প্রশাসন ক্যাডার, ট্যাক্স ও পুলিশ ক্যাডারে সুযোগ না পেয়ে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন। তাই তাদেরকে ‘বাইচান্স’ শিক্ষা ক্যাডারও বলা হয়। তবে, অনেকেই আছেন যারা স্বেচ্ছায় শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিয়েছেন শিক্ষকতা করার আশায়।

নায়েমের নতুন মহাপরিচালকও বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত । কিন্তু অপেক্ষাকৃত জুনিয়র অধ্যাপক হওয়ায় তাঁকেও মানতে পারছেন না নায়েমে নিযুক্ত শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ - dainik shiksha ঢাকাসহ ১৩ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাল বন্ধ প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত - dainik shiksha টেম্পু চাপায় কলেজছাত্রী নিহত কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031189918518066