তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তুতি, হুলুস্থুলের পর পরীক্ষা স্থগিত

রংপুর প্রতিনিধি |

রংপুরের একটি বেসরকারি কলেজে ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিলো। সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে এনটিআরসিএর সুপারিশ ছাড়া ওই কলেজের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে খবর ছড়িয়ে পরলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে নিয়োগ বোর্ডের ডিজির প্রতিনিধি ও সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ পরীক্ষা স্থগিত করেন।

বুধবার দুপুরে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক পদের ওই নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিলো। কিন্তু পরে সে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিঠাপুকুর উপজেলার শুকুরেরহাট কলেজ থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজে অতি গোপনে প্রভাষক নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া প্রস্তুতি চলছিলো। নিয়োগ বোর্ডের ডিজির (মাউশির মহাপরিচালক) প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ এ আয়োজন করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে যান। বিধি বহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ তুললে তাদের সঙ্গে অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়োগে বিষয়ের বিশেষজ্ঞ হিসেবে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন  শিক্ষক কেন্দ্র থেকে থেকে সরে পড়েন।

এদিকে বুধবার ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা। এ কারণে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশ ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো। কিন্তু তা না মেনে অনার্স তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষার কেন্দ্র সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজেই অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ ওই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন বলে জানা গেছে। 

নিয়োগ পরীক্ষার সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক অসিউজ্জামান, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আরিফুর রহমান, দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনিম নাজিরা রিদা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান। 

জানা গেছে, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২ অক্টোবর বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা খর্ব করা হয়। কিন্তু ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতো কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সম্প্রতি কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ না দেয়ার বিষয়ে কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে এনটিআরসিএ ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। এনটিআরসিএর সুপারিশ পেয়ে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হচ্ছেন।  

অভিযোগ উঠেছে, মিঠাপুকুরের শুকুরেরহাট কলেজের অধ্যক্ষ ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি ওই নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেন। আর এতে ডিজির প্রতিনিধি হিসেবে সব আয়োজন করেন সরকারি বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ। নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একজন প্রতিনিধি (বিষয় বিশেষজ্ঞ), কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি, গর্ভনিংবডির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ।
  
এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ চিন্ময় বাড়ৈ বলেন, ‘বৈধভাবেই নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার কাছে কিছু বিষয় গোপন করেন। যেহেতু নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলো। এসব কারণে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসনিম নাজিরা রিদা বলেন, আমরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দিতে এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে দেখি পরিস্থিতি ভিন্ন। 

শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ গোলজার হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রস্তুতি চলছিলো। ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষক কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দিতে পারে। নিয়োগ কার্যক্রম চলার সময় সাংবাদিকরা হঠাৎ করে সেখানে হাজির হন। এমন পরিস্থিতে নিয়োগ কার্যক্রম ভন্ডুল হয়। 

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সেলিম মণ্ডল বলেন, নিয়োগের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো অধ্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ করেন। আমাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মনোনীত করায় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তবে লোকজনের উপস্থিতিতে বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যক্ষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর মো. আব্দুল মতিন লস্কর  দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে কোন বেসরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না। এখন কি উদ্দেশ্য নিয়ে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছিল তা আমার জানা নেই। তবে জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের(শিক্ষা) দপ্তর থেকে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062649250030518