ত্রাণ তালিকায় জালিয়াতি : একই বাড়ির ঠিকানায় ২০২ নাম!

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ত্রাণ তালিকায় ব্যাপক জালিয়াতির তথ্য পাওয়া গেছে। একই বাড়ির ঠিকানায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে একাধিক নাম। প্রতি পরিবারে একজনকে তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ থাকলেও তালিকায় দেখা যায় একই পরিবারের একাধিক নাম। ওএমএস ও মানবিক সহায়তা পারিবারিক কার্ডপ্রাপ্তদের  তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও অসচ্ছলদের অন্তর্ভুক্ত করার কথা থাকলেও অনুসন্ধানে দেখা যায়, অসচ্ছলদের পরিবর্তে বিত্তবান, ব্যবসায়ী ও বাড়িওয়ালাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বেশি। এমন চিত্র পাওয়া গেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার (২১ মে) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনে আরও জানা যায় লায়েকুজ্জামান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ১২ নম্বর সেকশনের ব্লক ‘প’ বাসা ৫৩৬, তালিকায় এই বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে ক্রমিক নম্বর ৩২ থেকে ২৩৪ পর্যন্ত নামের বিপরীতে এই একই ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। ওই বাড়িতে ২০২টি পরিবার বসবাস করছে বলে উল্লেখ করা হয়। বাড়িটির মালিক শামসুল হক খান। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তালিকায় শামসুল হক খান, তাঁর স্ত্রী লতিফা বেগম, পুত্র আসাদ খান ও কন্যা নিলা খানমের নাম রয়েছে। এই তালিকায় উল্লিখিতরা প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার দুই হাজার ৫০০ টাকাসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ত্রাণ সহায়তা পাবেন। এটি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পারিবারিক মানবিক সহায়তা কার্ড হিসেবে পরিচিত।

দোতলা ওই বাড়ির মালিক শামসুল হক খান বলেন, ‘৫৩৬ নম্বর বাড়িটি আমার। আমি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। আমার ছেলে আসাদ খান বিদেশ থেকে এসে এখন বেকার। বাড়িতে ভাড়া থাকে চারটি পরিবার। আমার বাড়ির ঠিকানায় ২০২ জনের নাম কী করে এলো সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি এ পর্যন্ত শুধু কাউন্সিলরের দেওয়া ত্রাণ পেয়েছি। অন্য কোনো ত্রাণ পাইনি।’

একই সড়কের ৫২৮ নম্বর বাড়ির মালিক এমারত হোসেন। একতলা টিনশেড বাড়ি। জমা করা তালিকার ক্রমিক নম্বর ১ থেকে ২৫ পর্যন্ত নামের বিপরীতে ওই বাড়ির ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে, ওই বাড়িতে ২৫টি পরিবার বসবাস করে। তালিকায় বাড়ির মালিক এমারত হোসেনের নাম রয়েছে ক্রমিক ১-এ।

এমারত হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। আমি এবং আমার মা বসবাস করি। তালিকায় আমার নাম রয়েছে, এটা সঠিক। তবে আমার বাড়ির ঠিকানায় আরো ২৫টি পরিবারের নাম কী করে এলো, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

এই দুটি বাড়ির ঠিকানায় একাধিক লোকের নাম অন্তর্ভুক্ত দেখানো হলেও বাড়ি দুটির সামনে গড়ে উঠা বস্তির লোকেরা জানায়, কাউন্সিলরের লোকেরা তাদের কাছ থেকে কয়েক দফা জাতীয় পরিচয়পত্র নিলেও ত্রাণের তালিকায় তাদের নাম নেই। বস্তির বাসিন্দা মাহবুব, খাদিজা বেগম ও শাহ আলম জানান, বর্তমানে তাঁরা কর্মহীন, ঘরে খাবার নেই। বারবার কাউন্সিলর ও কাউন্সিলরের প্রতিনিধির কাছে গিয়েও ত্রাণের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারেননি তাঁরা। ফলে ত্রাণও পাননি।’

ত্রাণের তালিকায় অসচ্ছল বস্তিবাসী অন্তর্ভুক্ত না হলেও সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা হয়েছে, এমন দুই হাজার ২০০ জনের নামের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তালিকার সিংহভাগই বিত্তবান, বাড়িওয়ালা ও ব্যবসায়ী।

১২ নম্বর সেকশনের ‘ডি’ ব্লকের ২৫ নম্বর সড়কের ৩১ নম্বর বাড়ির মালিক মনিরুল ইসলাম। তাঁর বাড়িটি ছয়তলা। তিনি এলাকায় ডিশ ব্যবসা করেন। অত্যন্ত সচ্ছল মানুষ হিসেবে পরিচিত। তিনি নিজেও তাঁকে সচ্ছল বলে দাবি করেন। তালিকার ৪৩ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে তাঁর নাম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না, কিভাবে আমি তালিকাভুক্ত হয়েছি।’ আবার বলেন, ‘ফরম পূরণ করে কাউন্সিলরকে দিয়েছিলাম কি না মনে পড়ছে না। তবে সমস্যা নেই, আমাদের কাউন্সিলর ভালো লোক। তিনি নয়ছয় করেন না।’

একই তালিকায়, একই সড়কে ৪৪ ক্রমিকে নাম থাকা আনোয়ার হোসেনের ছয়তলা ভবনের নম্বর ১১। ৪১ ক্রমিকে নাম থাকা ছয়তলা ভবনের মালিক এস কে আলাউদ্দিনের বাড়ি নম্বর ৩০, আরেক ছয়তলা ভবনের মালিক জাকির হোসেনের বাড়ির নম্বর ২৯।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ওই ওয়ার্ডের বিপুলসংখ্যক অসচ্ছল কর্মহীন মানুষ ত্রাণের তালিকাভুক্ত হতে না পারলেও বহু বিত্তবান বাড়ির মালিক তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ১০৯/বি শের শাহ সুরী রোডের আবুল কাশেম, একই সড়কের ১১৬ নম্বর বাড়ির জাহাঙ্গীর আলম, ২৫/২১ নম্বর বাড়ির রুমান, ১৪১/১ নম্বর বাড়ির নাসির উদ্দিন, ৭০ নম্বর বাড়ির শফিকুল ইসলাম দাদন, বাবর রোডের ১৯/৮ নম্বর বাড়ির মালিক আবুল কালাম সেন্টুর নাম রয়েছে তালিকায়। এঁদের  কেউ তিনতলা, কেউ ছয়তলা বাড়ির মালিক, বিত্তবান ও ব্যবসায়ী। একইভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৩ নম্বর ওয়ার্ডে ত্রাণের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন অনেক ধনী ব্যক্তি। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাতুয়াইল দরবার শরিফ সড়কের পাঁচতলা বাড়ির মালিক ফজর আলী, মাতুয়াইল পশ্চিমপাড়ার ২০৪ নম্বর বাড়ির মালিক সোহেল মৃধা, মাতুয়াইল মাছপাড়ার ১৪৪/৫ নম্বর বাড়ির মালিক পরিবহন ব্যবসায়ী সানাউল্লা মিয়া ত্রাণের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। 

একই বাড়ির ঠিকানায় ২০২ জনের নাম এবং আরেকটি বাড়ির ঠিকানায় ২৫ জনের নাম কিভাবে তালিকাভুক্ত হলো, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা না। ওই একই হোল্ডিংয়ে কোনো বস্তি আছে কি না, বা কেন এটা হলো, বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে দেখব। এ ছাড়া বাড়ির মালিক বা বিত্তবানরা কিভাবে তালিকাভুক্ত হলো তা-ও আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023679733276367