প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেশের দক্ষিণের পথে রেলপথ উদ্বোধন করেছেন। উদ্বোধনের পর মাওয়া রেলস্টেশন থেকে একটি বিশেষ ট্রেনে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশনের দিকে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী স্টেশনে টিকিট কাটেন। বেলা দুইটার পরে তিনি ভাঙ্গায় পৌঁছান।
চীন থেকে আমদানি করা ১৪টি কোচ দিয়ে সরকারপ্রধানের জন্য ট্রেনটি প্রস্তুত করা হয়। উদ্বোধনের পর শিগগিরই এই পথে যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। তবে এখনো দিন-তারিখ ঠিক হয়নি।
বিশেষ ট্রেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছিলেন। ইউএনবির খবর বলছে, রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলামের সভাপতিত্বে রেলপথ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা।
সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য (মুন্সীগঞ্জ-২) সাগুফতা ইয়াসমিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। স্বাগত বক্তব্য দেন রেলওয়ে সচিব মো. হুমায়ুন কবির।
পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রেলপথটি ঢাকার গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মাদারীপুর-ফরিদপুর গেছে। আগামী বছর এই রেলপথের বাকি অংশ ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত চালুর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
বেলা দুইটায় ভাঙ্গার ডা. কাজী আবু ইউসুফ স্টেডিয়ামে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
পদ্মা সেতুতে রেলপথের উদ্বোধন ঘিরে পদ্মাপাড়ের মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস-আনন্দ দেখা গেছে। গতকাল সকাল থেকে শরীয়তপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ জাজিরার নাওডোবায় রেললাইনের পাশে ও পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কের ওপর জড়ো হন। শ্রীনগর ও পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তেও ভিড় জমান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। সেতুর দুই প্রান্তে রেললাইন ঘিরে চলে আনন্দমিছিল।
প্রসঙ্গত, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালু করা হয়। দ্বিতল এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। সেতুর ভেতরে রয়েছে ট্রেন চলাচলের পথ। পদ্মার দুই পাড়ে যোগাযোগ স্থাপন করতে নেওয়া হয় আলাদা প্রকল্প, যা পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প নামে পরিচিত।
বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪৩ জেলায় রেলপথ রয়েছে। ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথের মাধ্যমে মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুর রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হবে।
২০৩০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ রেলপথটির ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে প্রতিদিন ১৩ জোড়া ট্রেন চলবে। একইভাবে ভাঙ্গা-কাশিয়ানী অংশে প্রতিদিন সাত জোড়া ও কাশিয়ানী-যশোর অংশে প্রতিদিন চলবে পাঁচ জোড়া ট্রেন।
গতকাল ট্রেন উদ্বোধন শেষে প্রধানমনন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে নানা বাধা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয়েছে।এক ভদ্রলোক, বিশ্বজুড়ে নাম রয়েছে তার। কিন্তু বয়সের কারণে সামান্য একটা ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে পারবে না বলার কারণে, তার পক্ষে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু আমরা নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছি।
এ সময় বিএনপি-জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ভোট চুরি করা ছাড়া কোনোদিন ক্ষমতায় আসে নাই। যে কারণে ২০০৮ খ্রিষ্টাদ্বের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ২০ দলীয় জোট ৩০০ সিটে পেয়েছিল মাত্র ২৯টি। তারপর থেকে তারা নির্বাচন বয়কট আর মানুষের জীবন নিয়ে খেলার ধ্বংসযজ্ঞে মেতে আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই এ দেশে অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়। আর যারা নির্বাচনের ধুয়া তোলে আর প্রতিদিন আমাদেরকে ক্ষমতা থেকে হটায়, তারা কখনো অবাধ-নিরপক্ষে নির্বাচন চায় না। কারণ, তাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাত দিয়ে।
তিনি বলেন, বাঙালির ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এই দেশ আমাদের। রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছি। জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
ট্রেন ভ্রমণ শেষে ভাঙ্গায় আয়োজিত বিশাল জনসভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু করার সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু শেখ মুজিবের মেয়ে দুর্নীতি করতে পারে না। বিএনপি মনে করেছিল পদ্মা সেতু করতে পারবো না। কিন্তু আমরা করে দেখিয়েছি।
তিনি বলেন, শেখ মুজিব বলেছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না, আসলেই আর কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গেলে ফরিদপুরে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে। এ ছাড়া ফরিদপুরের প্রতিটি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলেই দেশের উন্নয়ন হয়েছে। ফরিদপুর পুরনো শহর, কিন্তু সবসময় অবহেলিত ছিল। আমরা সরকারে এসে উন্নয়ন করেছি। ফরিদপুরের মেডিকেল কলেজকে সম্প্রসারিত ও সেবার আধুনিকায়ন আমরাই করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে বন্ধ করে দেয়। আসলে ধ্বংস করাই তাদের চরিত্র। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে আবার উদ্যোগ নেই। অনেকে বলেছিল, এটা সম্ভব না। কিন্তু, আমরা পেরেছি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।