একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠনে দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অগ্রগতির জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। রাজনীতি ও রাজনীতির শিক্ষা- দুটোই অঙ্গাঙ্গি জড়িত বলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কখনোই রাষ্ট্রীয় ও দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত নয়। কিন্তু জাতীয় ঐক্য ও সমৃদ্ধির জন্যে সামগ্রিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান দুর্দশার অন্যতম প্রধান কারণ হলো গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় রাজনীতির প্রত্যক্ষ প্রভাব। বিগত দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণের অপ্রয়াসের মাসুল নানাভাবে শিক্ষাখাতকে দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানউত্তর রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও প্রাশাসনিক ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের প্রথম ধাপেই এ দুরবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে সামষ্টিক কল্যাণ ও অগ্রগতির উদ্দেশ্যে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র সংস্কারের আয়োজনে মধ্য দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং গুণগত মান উন্নয়নে দলীয়করণের প্রভাব থেকে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ও দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করা একান্ত জরুরি।
আশির দশকের পর থেকে নানাভাবে নানামাত্রায় বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রশাসনে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতে থাকে দলীয়করণের মাধ্যমে রাজনীতি প্রভাব বৃদ্ধির প্রচেষ্টা। প্রকৃতপক্ষে, শিক্ষাখাতে সরাসরি দলীয় রাজনীতির প্রভাব বিস্তারের সূচনা ষাটের দশকে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার মধ্যে দিয়ে। সময়ের বিবর্তনে ছাত্ররাজনীতির পথ ধরেই শিক্ষাঙ্গনে পদ-পদবী লাভের প্রচেষ্টায় শুরু হয় শিক্ষক রাজনীতি। ক্ষমতাসীনরা নিজ দলের শক্তি বাড়িয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে রাখার জন্যে পেশাজীবিদের সংগঠনগুলোকে দলীয় ব্যানারে নিয়ে আসতে শুরু করে। ফলে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি শিক্ষাখাতে রাজনৈতিক প্রভাব আরো তীব্র করে তুলেছে। এসুযোগে শিক্ষক, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা ফয়দা লুটার জন্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে চলেছে, যা একদিকে শিক্ষার পরিবেশকে কুলষিত করছে, অপরদিকে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করছে। শাসক দলের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের ফলে শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রমে পক্ষপাতিত্বসহ নানা দুর্নীতি, যেমন- স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ ও ভর্তি বাণিজ্য এবং ছাত্র রাজনীতির নামে সহিংসতা ও হল দখল একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপকমাত্রায় দলীয়করণ শিক্ষাব্যবস্থার মেরুদণ্ডকে দুর্বল করে ফেলেছে অনেকাংশে। দলীয় লোকজনকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পরিবর্তে রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর ভিত্তি করে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা শিক্ষাদানের পরিবর্তে সরকারি দলের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে চেষ্টা করেছে এবং শিক্ষার্থীদের ওপর দলীয় মতাদর্শ চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। সাম্প্রতিক খবরে প্রকাশ, শিক্ষকদের একটা বড় অংশ ভুয়া সনদপত্রের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এতে একদিকে যেমন অযোগ্য ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে শিক্ষার মানের অবনতি হয়েছে, অপরদিকে তেমনি শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার পরিবর্তন নানা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে পড়াশুনায় মনোযোগ না দিয়ে শাসক দলের নেতাদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করেছে এবং দলীয় রাজনীতির ছত্রছায়ায় ক্ষমতার স্বাদ নেয়ার চেষ্টা করেছে। একইভাবে, শিক্ষাপ্রশাসনে দলীয় লোকজনের উপস্থিতির কারণে এবং দলীয় রাজনীতির চাপে সরকারি প্রশাসনে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সকল সিদ্ধান্তগ্রহণ ও কাজকর্ম পরিচালনার ফলে শিক্ষাখাতসহ সর্বত্র সুশাসন বিঘ্নিত হয়েছে, হয়েছে নানা অন্যায়, অনাচার ও অবিচার।
আমাদের মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রসংস্কারের ও দেশগঠনের যে সুযোগ এসেছে সেটা হাতছাড়া হয়ে গেলে আমরা যে তিমিরে আছি, সে তিমিরেই থেকে যাবো। তাই শিক্ষাসংস্কারের প্রথম ধাপেই শিক্ষাপ্রশাসনে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও আইন প্রণয়নসহ সেগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বিশেষ করে আইনগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় লেজুড়বৃত্তি বন্ধ করার কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করতে হলে কেবল নীতিমালা প্রণয়ন যথেষ্ট নয়, সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধের পাশাপাশি প্রয়োজন কঠোর আইন প্রণয়ন। পেশাজীবি হিসেবে শিক্ষকদের সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ পেশাগত প্রতিশ্রুতি ও নৈতিকতার পরিপন্থি। তাই শিক্ষকসহ কোনো পেশার পেশাজীবী যদি দলীয় রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে চান, তাদেরকে অবশ্যই নিজ নিজ পেশা বা পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দলে সদস্য হিসেবে তা করতে হবে। যদি কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী দলীয় স্বার্থে প্রভাবিত হন বা অন্যকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির প্রভাবকে প্রতিরোধে নতুন নিয়মনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
মানবিক উৎকর্ষতায় মানুষ রাজনীতি সচেতন প্রাণী। তাই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা স্বভাবতই রাজনীতি সচেতন হবেন ও কোনো না কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস করতে পারেন। কিন্তু তাদের সে রাজনৈতিক সচেতনতা বা রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাস যেনো শিক্ষার পরিবেশ ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব না ফেলে। আমাদের এটা ভুললে চলবে না যে, রাষ্ট্র ও সমাজের ভবিষ্যত কর্ণধার হিসেবে শিক্ষার্থীদেরকে রাজনৈতিক সাক্ষরতা অর্জনের ও নাগরিক দায়িত্ববোধ তৈরির সুযোগ করে দিতে হবে। বস্তুত, প্রাত্যহিক ও কর্মজীবনে ভবিষ্যতের দায়-দায়িত্ব গ্রহণের জন্যে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সাক্ষরতা অর্জন অত্যাবশ্যক। কিন্তু সেটা দলীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তির বাইরে করতে হবে। আর সেটা তারা অর্জন করতে পারবে নিজেদের অধিকার আদায়, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতকরণ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার মাঝ দিয়েই। একুশ শতকের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যেই ২০২৪-এর জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে তারা সামাজিক ও রাজনৈতিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ও নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম। যেমনটা পূর্বেও আমরা দেখেছি বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সফল আন্দোলন পরিচালনায়। এই ধরনের সামাজিক ন্যায়বিচারমুখি চেতনা শিক্ষার অংশ হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে নাগরিক হিসেবে তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে এবং নিজেদের মধ্য থেকে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তুলতে পারে। এই প্রসঙ্গে, শিক্ষাক্রমে সমন্বিত পাঠ্যসূচির অংশ হিসেবে নাগরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দায় ও দরদের সমাজ প্রতিষ্ঠায় তাদের দেশের প্রতি মমতা ও দায়িত্ববোধ এবং নিজেদের নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বগুণ ও জবাবদিহিতা শেখানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ করে দেয়া উচিত। তবে প্রাতিষ্ঠানিক ও স্থানীয় পরিধিতে এসব কাজকর্মে দলীয় লেজুড়বৃত্তির প্রভাব যাতে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথাগত দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি ও তার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে দেশের জনগণ এখন সর্বাংশে ওয়াকিবহাল। ছাত্ররাজনীতি এমন এক ক্ষেত্র যা সঠিকভাবে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক চেতনাকে শাণিত করতে পারে। তবে দলীয় স্বার্থের প্রভাবে ছাত্ররাজনীতি সহিংসতা, দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতির পথে চলে যায়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার থাকা উচিত, কিন্তু তা যেনো কোনোভাবেই দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধ করতে হলে, আমাদেরকে ছাত্ররাজনীতির সংজ্ঞাকেও নতুনভাবে ধারণ করতে হবে এবং ছাত্ররাজনীতির পরিধিকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যদি রাজনীতি করতে চায়, তবে তা শিক্ষার পরিবেশ, মান উন্নয়ন এবং শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে সেটা সীমাবদ্ধ রাখা উচিত। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে বা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা কিংবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্যে দলীয় রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করা হলে তা শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশকে বিনষ্ট করবে এবং শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ভিন্ন পথে পরিচালিত করবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বাস্তব রূপ দিতে বাংলাদেশের শিক্ষাসংস্কার অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। আর সে জন্যে শিক্ষাব্যবস্থায় কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এবং শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি বন্ধ করে শিক্ষাব্যবস্থায় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি সুশৃঙ্খল, নিরপেক্ষ ও গঠনমূলক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার কোথাও যেনো দলীয় স্বার্থের প্রভাব না পড়ে, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও উদ্ভুত সমস্যার আশু সমাধান করতে হবে এবং সেসব করার জন্যে প্রায়োগিক নীতিমালা প্রণয়নসহ এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ গড়ে তোলার জন্য উপযুক্ত শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি এবং সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করা উচিত। এতে করে আমরা ‘বৈষম্যহীন ও স্বৈরাচারমুক্ত’ রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তনে একটি সুশিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে পারবো, যারা দেশকে সঠিক ও সফল নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি, অন্যায়, অনাচার, অবিচার ও অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।
লেখক: ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য