চার বেহারার পালকি, পরনে কালো সেরওয়ানি, মাথায় পাগড়ি পরে কয়েকশ’ বরযাত্রী নিয়ে নববধূকে নিতে যাচ্ছেন বর। গ্রাম বাংলার এমন হারানো ঐতিহ্য দেখতে পেয়ে এলাকার মানুষজন রীতিমতো অবাক। গতকাল শনিবার এমন দৃশ্য দেখা গেছে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা এলাকায়। বর জাকারিয়া সরকার স্ত্রীকে বরণ করতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন। বিষয়টি এলাকাবাসীর মাঝে হইচই পড়ে যায়।
জানা গেছে, বর জাকারিয়া সরকার উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমান সরকারের ছেলে। এক ছেলে এক মেয়ের মধ্যে জাকারিয়া বড়। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি বাবার ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।
এদিকে, কনে ফাতেমাতুজ জোহরা পিয়া একই গ্রামের আবু জেয়াদ আজাদ বিপ্লবের মেয়ে। পিয়ার বাবাও হার্ডওয়ারের ব্যবসা করেন। দুই সন্তানের মধ্যে পিয়া বড়। তিনি হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত। শনিবার বিকেলে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়।
বিয়ের দাওয়াত খেতে যাওয়া আবু ছালেহ, শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, পালকি একটি পুরনো ঐতিহ্য। আধুনিক এ যুগের বিয়েতে সচরাচর বাস-মাইক্রোবাস দেখা যায়। কিন্তু জাকারিয়ার বিয়ে পালকিতে হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। বিষয়টি সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
জাকারিয়ার গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে বিয়ের প্রত্যেকটি আনুষ্ঠানিকতাই ছিলো জাঁকজমকপূর্ণ। গায়ে হলুদ উপলক্ষে পুরুষদের জন্য ১৫০ পাঞ্জাবি, নারীদেরকে ২০০ শাড়ী উপহার দেন তিনি।
কনের বাবা আবু জেয়াদ আজাদ বিপ্লব দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা একই গ্রামের। বিয়েতে পালকি থাকবে এটা দুই পরিবারের সম্মতি ছিলো। পালকি গ্রাম বাংলার একটি হারানো ঐতিহ্য। এ প্রজন্ম পালকির নাম শুনলেও চোখে দেখেনি। হারানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই আমাদের এ আয়োজন।
বর জাকারিয়া সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কয়েক বছর আগে দাদা ওসমান আলী সরকার মারা যান। দাদার স্বপ্ন ছিল একমাত্র নাতির বিয়ে হবে পালকিতে। তাছাড়া কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য পালকি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। দাদার স্বপ্ন পূরণ এবং হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে মূলত এ আয়োজন বলেও জানান তিনি।