দারুলের সনদে স্কুলে চাকরি করেন প্রধান শিক্ষকের মামাতো ভাই

খুলনা প্রতিনিধি |

খুলনার তেরখাদা উপজেলার বি.আর.বি আজগড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহ-গ্রন্থাগারিক বিনোদ টিকাদার। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের রমেন্দ্রনাথ মল্লিকের আপন মামাতো ভাই তিনি। দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন এ পদে। তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালটিকে অবৈধ ঘোষণা করায় তার সার্টিফিকেটেরও বৈধতা নেই। এর পরও সেই সার্টিফিকেটেই চাকরি হয়েছে বিনোদের। আর এতে যোগ্য প্রার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই এই নিয়োগ বাতিলের দাবি করছেন তারা।

 

২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে সহ-গ্রন্থাগারিক পদে যোগ দেন বিনোদ। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে আবেদনের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতায় দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে ডিপ্লোমার একটি সার্টিফিকেট দেখিয়েছিলেন। তবে অবৈধ সার্টিফিকেট হওয়ায় বিনোদের নিয়োগও অবৈধ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আদালতের আদেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধসহ দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালটির অননুমোদিত ক্যাম্পাস ও ওয়েবসাইট বন্ধে বিটিআরসি চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব (বিশ্ব:১) ফাতেমা জাহান উল্লেখ করেন, উচ্চশিক্ষা প্রদানের বদলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় অবৈধ সার্টিফিকেট প্রদান করছে। আর ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসির তালিকাভুক্ত নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধতা না থাকায় তাদের সার্টিফিকেটেরও বৈধতা নেই।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিনোদকে নিয়োগ দেওয়ার সময় তারা প্রতিবাদ জানালেও বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক সেই দাবি শোনেননি। পরে বিষয়টি বিভিন্ন দপ্তরে জানানো হয়। তবে বিনোদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই এবার অবৈধ নিয়োগ বাতিল ও এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য অপূর্ব মল্লিক জানান, পরিচালনা পরিষদের সভায় বিনোদকে চাকরিচ্যুতের দাবি উঠেছে বহুবার। তবে সদস্যদের দাবি লিপিবদ্ধও করেননি প্রধান শিক্ষক। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ডক্টর আলমগীর হোসেন ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর শেখ হারুনর রশীদ বলছেন একই কথা। তাদের মতে, আদালতের নির্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধতা না থাকলে এর সার্টিফিকেটেরও বৈধতা থাকে না। তাই সার্টিফিকেটের বৈধতার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সন্তোষজনক উত্তর না দিয়ে বারবার প্রসঙ্গ এড়ানোর চেষ্টা করেন বিনোদ টিকাদার। এমনকি কিছু প্রশ্নের জবাব না দিয়ে চুপ থেকেছেন।

এদিকে প্রধান শিক্ষক রমেন্দ্রনাথ মল্লিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিনোদ তার গ্রামের মামাতো ভাই। তবে নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলতে রাজি হননি তিনি।

তেরখাদা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, হেডমাস্টার আর ওই শিক্ষককে ডেকে পাঠানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027320384979248